ডেস্ক নিউজ : ২১ জুলাই ২০২৫—রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল দেশ। সেই আগুনের বিভীষিকা এখনও তাড়া করে ফিরছে বেঁচে যাওয়া শিশুদের। তবে সম্প্রতি রোটারি ক্লাব বনানী ও ছুটি রিসোর্ট পূর্বাচলের আয়োজনে একদিনের জন্য হলেও তারা ভুলে থাকতে পেরেছে সেই ভয়াবহ দিন।
‘হিলিং টুগেদার উইথ মাইলস্টোনস ব্রেভ হার্টস’
‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি’— এই স্লোগানে দিনব্যাপী আয়োজনটি হয়ে উঠেছিল আনন্দঘন। অংশ নিয়েছিল মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির বেদনা বয়ে বেড়ানো প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী।
দিনব্যাপী কর্মসূচিতে ছিল মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সেশন, ছবি আঁকা, ট্রেজার হান্ট প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা এবং সবশেষে নিজেদের কষ্ট কাগজে লিখে তা দিয়ে নৌকা বানিয়ে নীল জলে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রতীকী আয়োজন।
“আমার বোনকে পোড়া দেহে কোলে তুলেছিলাম”
তাহসিন আব্দুল্লাহ, মাইলস্টোন স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ অস্বাভাবিক শব্দ শুনে দৌড়ে ফের স্কুলে আসে।
সে জানায়, “দেখি বিমান পড়ে আগুন লেগেছে। হন্য হয়ে বোনকে খুঁজতে থাকি। একসময় দেখি, পোড়া দেহ নিয়ে বেরিয়ে আসছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু কয়েকদিন পর বোনটা চলে গেল চিরতরে।”
চোখের জল মুছতে মুছতে তাহসিন বলে, “আমরা দুই ভাইবোনের বয়সের পার্থক্য তেমন ছিল না। সবকিছুর সঙ্গী ছিল বোন। তাকে হারিয়ে মনে হয়, আমরা একটা পার্টনার হারিয়েছি।”
“বন্ধুদের বাঁচাতে আমি নিজেই আগুনের ভেতরে গিয়েছিলাম”
সূর্য সময়, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগুনের ভেতর থেকে একে একে বন্ধুদের নামিয়ে আনে সে। তার ভাষায়, “আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না। নিজের জামা দিয়ে মুখ ঢেকে জানালার পাশে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরে বন্ধুরা পড়ে আছে দেখে একে একে সবাইকে উদ্ধার করেছি, তারপর নিজে নেমেছি।”
“বেদনাগুলো নীল জলে ভাসিয়ে দিলাম”
ইভেন্ট শেষে শিক্ষার্থী আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “সারাদিন ইভেন্টে ব্যস্ত ছিলাম। আনন্দ করেছি। কষ্ট কিছুটা ভুলে থাকতে পেরেছি।”
আরেক শিক্ষার্থী আফিফ জানায়, “খেলেছি, অংশ নিয়েছি— খুব ভালো লেগেছে। কষ্টটা মনে ছিল না।”
“ওদের ট্রমা একটু একটু করে হালকা হচ্ছে”
মাইলস্টোনের সিনিয়র লেকচারার অভিজিত অধিকারী বলেন, “ট্র্যাজেডির পর থেকে প্রতিদিনই চেষ্টা করছি— ওদের ট্রমা যেন হালকা হয়, যেন আবারও হাসতে পারে, স্বপ্ন দেখতে পারে। আজকের আয়োজন সেই প্রচেষ্টাকে আরও দূর এগিয়ে দিল।”
মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড মনিরা রহমান বলেন, “এমন আয়োজন শিশুদের মানসিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা আবারও বন্ধুর মুখে হাসি দেখে বিশ্বাস পায়— জীবন থেমে থাকে না।”
চিত্রশিল্পী তাহমিনা হাফিজ লিসা বলেন, “বাচ্চাদের ছবিতে চোখের জল, স্মৃতি— সবই ছিল। স্মৃতির রঙ কখনো মুছে যায় না। এমন কাজে তাদের আরও যুক্ত করা দরকার।”
কিউএনবি/অনিমা/২৯ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৫৯