আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল যদিও এ বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থায়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে দলটির মার্কিন শাখা ও প্রবাসী সমর্থকদের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে।
পাকিস্তানে পিটিআই-এর প্রধান অ্যাকাউন্ট থেকেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হুসেইন নদীমের টুইটসহ একাধিক পোস্ট পুনরায় শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘তাদের ইচ্ছা ইমরান খানকে ভুলে যাওয়া; আমাদের ইচ্ছা তাকে মনে রাখা এবং সক্রিয় রাখা।’
Free Imran Khan – Full Page advert in The New York Times by Pakistani-American diaspora pic.twitter.com/4qMB4D1TR5
— Ashok Swain (@ashoswai) August 4, 2025
দলের তথ্যমন্ত্রী শেখ ওয়াকাস আকরাম রোববার বলেন, ‘আমি আমাদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে যে, বিজ্ঞাপনটি তারা দেয়নি, সম্ভবত কোনো ডাক্তারের সংগঠন বা প্রবাসী কমিউনিটি এটি দিয়েছে।’
‘ফ্রি ইমরান খান’ শিরোনামের বিজ্ঞাপনটি ২ আগস্টের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ছাপা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, ইমরান খান ৭০০ দিনের বেশি সময় ধরে ‘অন্যায্যভাবে বন্দি’ রয়েছেন। তার ওপর অমানবিক আচরণ, একাকী বন্দিত্ব ও মতপ্রকাশ দমনের অভিযোগও তোলা হয়েছে। বিজ্ঞাপনটিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পাকিস্তানে বেসামরিক শাসনের প্রতি সমর্থন জানাতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
পিটিআই ইউএসএ সভাপতি সাজ্জাদ বুরকি একটি টুইটে লেখেন, ‘‘ইমরান খানের অবৈধ বন্দিত্ব ও দুর্বিষহ পরিস্থিতি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন। ফার্স্ট পাকিস্তান গ্লোবাল ও পাকিস্তানি-আমেরিকান প্রবাসীদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’’
বিজ্ঞাপনটি ‘ফার্স্ট পাকিস্তান গ্লোবাল’ ও ‘পাকিস্তানি-আমেরিকান ডায়াসপোরা’র যৌথ উদ্যোগে ছাপানো হয়েছে। এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ৫ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে পিটিআই।
বিজ্ঞাপনটির খরচ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই চ্যাটবট ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রকাশ্য বিজ্ঞাপনমূল্য তালিকার মাধ্যমে হিসেব করে দেখার চেষ্টা করছেন, যা অনুযায়ী একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপনের মূল্য হাজার হাজার ডলার হতে পারে।
সমর্থকরা এটিকে ইমরান খানের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরির কার্যকর কৌশল হিসেবে দেখলেও সমালোচকরা এর বিরোধিতা করছেন। সাংবাদিক সৈয়দ তালাত হুসেইন টুইটারে লেখেন, ‘অ্যাবসোলিউটলি নো আমেরিকা’ থেকে এখন ‘অ্যাড-সলিউটলি প্লিজ আমেরিকা’ — পিটিআই, গোল্ডস্মিথ পরিবারসহ সকলে মিলে ইমরান খানকে ‘ভিকটিম’ দেখাতে চাইছে। তবে এটি বেশিদূর এগোবে না। উল্লেখ্য: এটি একটি পেইড অ্যাড, সম্পাদকীয় নয়। আর ট্রাম্প তো নিউইয়র্ক টাইমসকে ঘৃণা করে।’’
সমর্থকদের কেউ কেউ বিজ্ঞাপনটিকে ‘ওপ-এড’ হিসেবে উল্লেখ করায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা বলেন, এটি পত্রিকার নিজস্ব মতামত নয়, বরং অর্থের বিনিময়ে ছাপা একটি বিজ্ঞাপন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জাতীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তারা পিটিআইকে দেশীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বিদেশি সহানুভূতি খোঁজার অভিযোগ এনেছে। এদিকে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে পিটিআই-এর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লন্ডনে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে সমর্থকরা জড়ো হয়ে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।
কিউএনবি/আয়শা/৪ আগস্ট ২০২৫/সন্ধ্যা ৬:৫৫