রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন

“নদীতে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন”শত শত একর আবাদি জমিতে বালু দস্যুদের রাস্তা নির্মান, প্রশাসন নিরব

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ।
  • Update Time : শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
  • ৩৪ Time View

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : তিস্তা নদীতে বোমা মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা বালু দিয়ে আবাদি জমিতে রাস্তা নির্মাণ করছেন বালু দস্যুরা। তিস্তা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করতে গ্রামীন রাস্তা নষ্ট করছে বালু দস্যুদের ট্রাক। সেই ট্রাক রাস্তায় চলাতে নিষেধ করায় নতুন করে নদীর বালু নেয়ার জন্য আবাদি জমিতে রাস্তা নির্মাণ করছেন। আর নাম দেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মান।

বালু উত্তোলন বন্ধে এবং আবাদি জমির উপর নতুন করে রাস্তা নির্মান বন্ধ করতে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকাবাসী। এরপরও থেমে নেই বালু দস্যুদের বালু উত্তোলন। দিনরাতে একাধিক বোমা মেশিনে উত্তোলন করা হচ্ছে তিস্তা নদীর বালু। এতে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ তীব্র ভাঙন ও শত শত একর জমি অনাবাদির শ্বঙ্কায় পড়েছেন তিস্তা পাড়ের লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মুন্সির বাজার এলাকার শত শত পরিবার। ভাঙন আতংকে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম।

স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে,  তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে মুন্সির বাজার এলাকা নব্বই দশকে বিলিন হলেও পরবর্তিতে তা জেগে উঠে চরাঞ্চলের পরিনত হয়। জেগে উঠা জমিতে চাষাবাদসহ বসতি স্থাপন করে এলাকাবাসী। গত ১০ বছর আগে মুন্সির বাজার এলাকায় তিস্তার তীরবর্তি ছিন্নমুল ভুমিহীনদের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মান করে দেয় সরকার। গুচ্ছগ্রামে যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা এবং ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ব্রীজও নির্মান করে সরকারের ত্রাণ ও পুনবাসন মন্ত্রনালয়। শুধু তাই নয়, জনগুরুত্বপুর্ন এ রাস্তাটি সংস্কার করতে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা ব্যায় করেছে সরকার। তবে কালক্রমে গুচ্ছগ্রামটি পুনরায় তিস্তা নদী গর্ভে বিলিন হলেও রাস্তা ও ব্রীজটি আজও যাতায়তের জন্য ব্যবহার করছে গ্রামবাসী।

এ রাস্তাটি কালীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে চরাঞ্চল হয়ে রংপুরের গংগাচওড়া উপজেলার মিনার বাজার পর্যন্ত বিস্তৃীত। বালু দস্যু চক্রটি বিগত দিনে ফ্যাসিস আওয়ামীলীগের সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের প্রভাব খাটিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ফ্যাসিসের বিদায় হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। ফ্যাসিসদের দোসররা আজও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বালু পরিবহনের ট্রাক যাতায়াতের কারনে রাস্তাটি খানাখন্দরে ভড়ে গেছে। সাধারন মানুষ ও গরুর গাড়ি পরিবহনে প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে তো একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

রাস্তাটি রক্ষায় সাম্প্রতিক সময় স্থানীয়রা এ রাস্তা ও ব্রীজ ব্যবহার করে বালু পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বালু দস্যুরা জোরপুর্বক পাশে আরও একটি রাস্তা নির্মান শুরু করেছে বালু পরিবহনে। সেই রাস্তাটিও নির্মান করা হচ্ছে তিস্তা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে। নতুন রাস্তা নির্মান হলে ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ব্রীজসহ কোটি টাকা ব্যায়ের এ রাস্তাটি সম্পুর্নরুপে অকেজ হয়ে পড়বে। এতে পানি নিস্কাশনের অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়বে শতাধিক একর জমি।

তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে মৌখিক অভিযোগে কাজ না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতেও থেমে থাকেনি বালু দস্যুদের কার্যক্রম। ব্রীজ ও আবাদি জমি রক্ষায় সাম্প্রতিক সময় স্থানীয়রা একাধিকবার মানবন্ধনও করেছেন।

স্থানীয় ৭০ বছরের ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ রানা নামে এক বৃদ্ধ বলেন, আমাদের জেগে উঠা জমিতে গত ১০ বছর আগে এ রাস্তা ও ব্রীজ নির্মান করে গুচ্ছগ্রামসহ স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য। সেই রাস্তাটি থাকতেই তার সামনে আবার নতুন করে রাস্তা নির্মান করা হচ্ছে আমাদের আবাদি জমির উপর দিয়ে। বড় বিষয় হচ্ছে নতুন রাস্তার কারনে ব্রীজটিও অকেজো হয়ে পড়বে। এতে পানি নিস্কাশনের অভাবে শত শত একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। বালু দস্যুরা পেশিশক্তির বলে এমনটা করছেন বলেও জানান তিনি। প্রশাসন তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা জিরোটলারেন্স। খবর পেলেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গেলেই ছটকে পড়ে বালু চক্র। দীর্ঘ দিনের রাস্তা ও ব্রীজ অকেজো করে নতুন ভাবে আবাদি জমির উপর রাস্তা নির্মানের কোন সুযোগ নেই। আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিউএনবি/আয়শা//২৮ জুন ২০২৫, /বিকাল ৪:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit