মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

পথে বেড়ে উঠা শিশুদের ৫৮ শতাংশেরই নেই জন্মসনদ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ১৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯১ শতাংশ সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়েছেন। এই জনগোষ্ঠী চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিনযাপন করছে। জীবিকার তাগিদে তারা শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করছেন। এছাড়া সরকার দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও পথ শিশুদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি কর্মসূচি নিলেও পথশিশুদেরও প্রায় ৯৪ শতাংশ সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। পথে বেড়ে উঠা শিশুদের ৫৮ শতাংশেরই জন্ম সনদ নেই। যার ফলে তারা শিক্ষার অধিকারসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কারিতাস বাংলাদেশ আয়োজিত মিডিয়া পরামর্শ সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী শহরের ৬৬৭ জন পথশিশু ও বস্তি এলাকায় বসবাসরত ১,২৪৬ টি পরিবারের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়। কারিতাস বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি অফিসার রবিউল আলম জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারী পথশিশুদের ৫৮.২ শতাংশ (৩৮৮ জন) শিশুর জন্ম সনদ নেই। জন্মসনদ না থাকা এসব শিশুদের ৭১.৪ শতাংশ নিজের বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর জানে না। যার ফলে জন্ম নিবন্ধন করতে তারা নানা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। জরিপের পথশিশুদের শিক্ষার বিষয়েও হতাশাজনক চিত্র উঠে আসে। জরিপে অংশ নেওয়া মোট শিশুদের মধ্যে ৫১.৬ শতাংশ বর্তমানে স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ছে না। সরকারে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অংশগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা মাত্র ৫.৭ শতাংশ (৩৮-জন); বাকি প্রায় ৯৪.৩ শতাংশ পথশিশু সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়েছেন।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া বস্তি এলাকায় বসবাসরত ১,২৪৬টি পরিবারের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ পরিবার নিম্নবিত্ত শ্রেণির (১২,৫০০ টাকার নিচে আয়), এসব পরিবারের ৯১.৭ শতাংশ কোনো সরকারি সুরক্ষা সুবিধা পায়নি। এসব পরিবারগুলোর মধ্যে ৩৮.১ শতাংশে পথশিশু হয়ে যায়। বস্তি এলাকায় বসবাসরত ৪৪.৪ শতাংশ পরিবারের সব শিশুদের জন্মসনদ থাকলেও ৩২.৯ শতাংশ পরিবারের কোনো শিশুরই জন্মসনদ নেই বলে জরিপে উঠে আসে। সভায় পথশিশুদের প্রতিনিধিরা নিজেদের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।

তারা বলেন, আমরা সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত অংশ। আমাদের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা নানা সময়ে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হই। সরকার যদি আমাদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা চাই-ভাতার আওতায় আমাদের অন্তর্ভুক্তি, জন্মসনদ প্রদান, নিরাপদ আশ্রয়, মানসম্মত শিক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা এক পথশিশু বলেন, মা-বাবা মারামারি করতো। খাবার পেতাম না। এক পর্যায়ে মা-বাবা ডিভোর্স হয়ে গেলে অসহায় হয়ে পড়ি। এখন আমাদের একটাই দাবি, জন্ম সনদ চাই। সরকারের সুযোগ সুবিধা চাই। সভায় কারিতাস বাংলাদেশ পক্ষে সংস্থার পরিচালক (কর্মসূচী) দাউদ জীবন দাশ সরকার ও বেসরকারি সংস্থার প্রতি কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, পিতামাতাহীন শিশুদের জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজকরণ এবং প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক ক্যাম্পেইন চালিয়ে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিতকরণ;

শিশু জন্মের পরপরই হাসপাতাল-কমিউনিটি ক্লিনিকে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা চালু করা; পথশিশুদের রাস্তা থেকে ফেরাতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করা, যার মধ্যে শর্তযুক্ত ভাতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে যাতে পরিবার শিশুর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে; শিশুশ্রম বন্ধ এবং শিশুশ্রম ও অন্য কারণে ঝরে পড়া শিশুদের শনাক্ত করে তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; পথশিশুদের শিক্ষা গ্রহনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা যাতে এসব শিশুরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা চলমান রাখে, দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ভাতার পরিমাণ বাস্তবসম্মতভাবে বৃদ্ধি করা ও আবেদন প্রক্রিয়া সহজকরণ।

দাউদ জীবন দাশ বলেন, সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যে অল্প সংখ্যক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আছেন তারা যে ভাতা পাচ্ছেন তা খুবই নগণ্য। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক ৫০০-৬৫০ টাকা ভাতা কখনো বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী নয়। অন্যদিকে পথ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীও হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি। দেশে যে পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা রয়েছেন তাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব পরিবার ও রাষ্ট্রের। আমরা যদি এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যার্থ হয়ে যাই তাহলে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা অনেকাংশেই পিছিয়ে যাব। তাই তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে অবিলম্বে সরকারসহ আমাদের সবার নজর দিতে হবে।

সভায় অন্যের মধ্যে কারিতাস বাংলাদেশ এর এসডব্লিউভিসি সেক্টরের ইনচা সেক্টরের ইনচার্জ চন্দ্র মনি চাকমা, প্রোগ্রাম অফিসার কুসুম গ্রেগরি, অসীম ক্রুজ ও বারাকার প্রোগ্রাম অফিসার আশ্বনী প্রিন্স গমেজসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, পথশিশুদের প্রতিনিধি, অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৭ জুন ২০২৫, /বিকাল ৪:৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit