ডেস্ক নিউজ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণইফতারের আয়োজন করা হয়। শুরুতে মাসব্যাপী ইফতারের আয়োজনের কথা বললেও তিনদিনেই শেষ হয়েছে এই কর্মসূচি। তবে আয়োজন শেষ হলেও প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগের কারণে প্রশংসায় ভাসতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের ফেসবুক গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাসব্যাপী ইফতার কর্মসূচির ঘোষণা দেন উপউপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। প্রথম দুই রোজায় আয়োজনের পর কিছুদিনের জন্য ইফতার আয়োজন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরে ষষ্ঠ রোজায় শেষদিনের মতো ইফতার আয়োজন করে প্রশাসন। এতে মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন তিনদিনেই শেষ হয়। তিন দিনের ইফতার কর্মসূচিতে প্রায় ৩০ হাজারের মতো শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বরাদ্দ ইউজিসি থেকে আসে। প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি থেকে শিক্ষার্থীদের ইফতার বাবদ প্রায় ২৫ লাখ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন বলেন, যদিও ইফতারের প্রথম দিন কিছু অব্যবস্থাপনা ছিলো। তবে প্রশাসনের উদ্যোগ খুবই ভালো ছিলো। তবে একটা প্রশ্ন এখানে থেকে যায় যে, ইফতারে অর্থ কোথা থেকে আসলো। প্রশাসন বলেছে, ইউজিসি থেকে এসেছে। যদি এমন হয় তাহলে শুধু কেনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পেলো? আর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে খরচ করা হয় তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় হলের খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে পারতো। কারণ ডাইনিংয়ের খাবারের মান কেমন তা আমরা সবাই জানি। পরিকল্পিত কাজ করলে প্রশাসন আরও বেশি প্রশংসা পেতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. আতাউল্লাহ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গণইফতার আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এইরকম উৎসবমুখর পরিবেশে ইফতার করতে অনেক আগ্রহী। তবে শুধুমাত্র তিনদিন আয়োজন করায় আমরা আশাহত। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় শুধুমাত্র রাবিকে গণইফতারের ফান্ড কেনো দিলো? দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রকম ফান্ড দিয়ে গণইফতার করলে, বৈষম্যহীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, শুনেছি, ইউজিসি থেকে ইফতারের জন্য ২৬ লক্ষ টাকা বাজেট এসেছে। এই আয়োজনের সঙ্গে বিশেষ একটি সংগঠনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া অফিসিয়াল কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এই অর্থের উৎস ও ব্যয় প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।
প্রশাসনের সমালোচনা করে এই অধ্যাপক বলেন, প্রথমত এই ইফতার আয়োজন দুঃস্থ ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য হতে পারত। দ্বিতীয়ত বাজেট যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের জন্যই হয় তাহলে বিভাগের অধীন বাজেট বণ্টন করা যেত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক-অনাবাসিক কোনো শিক্ষার্থী বঞ্ছিত হত না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা প্রথমত চেয়েছিলাম ইফতারের বাজেটের জন্য কোনো একটি স্পন্সর জোগাড় করব। এরপর ইউজিসিকে বলার পর ইউসিসি রাজি হয়ে একটা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব টাকা ইউজিসি থেকে আসে। তবে তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো খাত থেকে না, ইউজিসি থেকেই বরাদ্দের পুরো টাকাটা এসেছে।
ইফতার বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, এই অর্থ ইউজিসি থেকে এসেছে। ইউজিসি কোনো একটি সংশোধিত বাজেটের বিবিধ থেকে টাকাটা দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ যেহেতু ইউজিসি থেকে আসে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
ইফতার বাবদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. তানজিমউদ্দিন খান বলেন, ইফতার বাবদ ইউজিসি থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। জুলাই আন্দোলনে নিহত বা আহত শিক্ষার্থীদের জন্যই অর্থ বরাদ্দ দিতে পারছি না, সেখানে ইফতার বাবদ আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ মার্চ ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:১২