এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা পৌরশহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি ও ছিনতাই বেড়েই চলেছে। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উপজেলার অপরাধ চিত্র। বিশেষ করে ওসি আনোয়ার হোসেনের যোগদানের পর থেকে উপজেলায় চুরি-ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ২০২৪ পাঁচ আগষ্টের পরে উপজেলায় ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এক মাসেই তিনটি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শেষ তিনটি হত্যা কান্ডে চৌগাছা থানা পুলিশ কোনো আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে পুলিশের চরম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে উপজেলার সাধারণ মানুষ। আর পুলিশের নিরব ভুমিকায় অপরধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ১০ মার্চ উপজেলারনারায়ণপুর গ্রামে স্বামী রকিবুল ইসলামের হাতে স্ত্রী রোকসনা খাতুন খুন হয়। এ ঘটনায়ও চৌগাছা থানার পুলিশঘাতক রকিবুল ইসলামকে আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে। ৮ মার্চ ভোরে উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৪৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে তার ছেলে রমিম(২২)। এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ রমিমকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গত ৩০ জানুয়ারি অপহরণের শিকার ট্রাক ড্রাইভার মিন্টু মিয়াকে সন্ত্রাসীদের ডেরা থেকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় পুলিশ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়।
এ হামলায় দুই পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হন। যদিও মামলার এজাহারে পুলিশ আহতের বিষয়টি এড়িয়ে যান ওসি আনোয়ার হোসেন। এতে উপজেলার সাধারণ মানুষের নিকট পুলিশের ইমেজ ব্যাপক সংকট তৈরি হয়। ১৯ জানুয়ারি ভোরে চৌগাছা পৌর শহরের বেড়বাড়ির খাল থেকে রকির লাশ উদ্ধার করেন যশোর পিবিআই পুলিশ। রকির লাশ ভৈরব নদের পটের নিচে চাপা দেয়া ছিল। রকি উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পুড়াহুদা গ্রামের কৃষক লিয়াকত হোসেনের ছেলে। সে ১৬ জানুয়ারি ইজিবাইকসহ নিখোঁজ হয়। এই অপরাধে জড়িত তিনজনকেই আটক করেন যশোর পিবিআই। এ ঘটনায় ওসি আনোয়ারের ভুমিকা ছিল রহস্যজনক। ১০ ডিসেম্বর চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বাঘারদাড়ী গ্রামের চার সন্তানের জননী গৃহবধূ রাবিয়া বেগম (৪০) কেহত্যা করে একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী তামিম হোসেন। ২২ অক্টোবার উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামে বিএনপি কর্মী শওকত আলীকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামীলীগের কর্মীরা। ২৯ অক্টোবর উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান হত্যার শিকার হন। এ সকল ঘটনায় মামলা হলেও ধরা- ছুয়ার বাইরে রয়েছে আসামীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৌগাছা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করেছে চিহ্নি সন্ত্রাসীরা। মাদক বেচাকেনাও বেড়েছে ব্যাপক হারে।
এ ছাড়া আগে বড় কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশের যে তৎপরতা বা অভিযান থাকতো, সেটাও ঝিমিয়ে পড়েছে। সম্প্রতি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিক বক্তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলোর তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের মধ্যে এখন আগের মতো পুলিশের ভয় নেই। ফলে সাধারন মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেজীবন যাপন করছেন। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার ফলে উপজেলায় চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। বলাচলে প্রতি রাতেই মানুষের গরু-ছাগল, মোটরসাইকেল, মোবাইল, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চুরি হচ্ছে। চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম মোরশেদ বলেন, সম্প্রতি উপজেলায় হত্যা, চুরি, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের দৌরত্ব বেড়েই চলেছে। কিন্তু পুলিশ সন্ত্রাসীদের দমন না করে চৌগাছার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে পতিত সরকার আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, চৌগাছা থানার পুলিশ এখনো আওয়ামীলীগের দালালি করছে। আওয়ামীলেগের সন্ত্রাসীরা শহরে দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশের ভুমিকা নিরব।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পুশিল গুরুত্ব দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলার সকল কর্মকর্তাদের মনে এখনো আওয়ামী প্রীতির ভুত চেপে রয়েছে। পুলিশের নিরব ভুমিকার কারনে অসাধু চক্র উপজেলাকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে। চৌগাছায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে অস্বীকার করে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের তৎপরতা মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি। চুরির কোনো খবর আমার জানা নেই। কেউ না জানালে আমি কিভাবে জানব চুরি হচ্ছে। আমরা স্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি। হত্যাকান্ডে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/১৪ মার্চ ২০২৫,/রাত ৯:৪৯