শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

চৌগাছা থানার ওসি পায়েলের অশ্লীল অডিও-ভিডিও ভাইরাল স্ট্যান্ড রিলিজ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)
  • Update Time : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৯৯ Time View

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : অশ্লীল অডিও-ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর যশোরের চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পায়েল হোসেনকে যশোর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তাকে যশোর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ।ঘুষ ও রিমান্ড বাণিজ্য, গোপন টর্চার সেল পরিচালনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে ওসি পায়েল হোসেনের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির একটি ভিডিও ম্যাসেঞ্জারে ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে। মুহুর্তেরমধ্যে তা ভাইরাল হয়।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) তাকে যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।গত ১৭ নভেম্বর পায়েল হোসেন চৌগাছা থানায় ওসি হিসেব যোগদান করেন।এর আগে তিনি ডিএমপির রমনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ছিলেন। চৌগাছা থানার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণের সাথে দূর্ব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।থানায় যোগদান করে প্রথম অভিযানে চৌগাছা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি পুলিশের সাবেক এএসআই জসিম উদ্দিনের পৌর শহরের বাড়ি ফারহানা টাওয়ারে অভিযান চালান। অভিযোগ উঠেছে, জসিম উদ্দিনের বাড়ি পুলিশ সারারাত অবরুদ্ধ করে রাখে এবং তার কাছে ওসি ১ কোটি টাকা দাবি করেন।উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের বিএনপি কর্মী মানিক হোসেনকে আটক করে থানায় আনার পর হাজতে না রেখে নিজের বাংলোতে গোপন সেলে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালান। এ সময় মানিকের স্ত্রীর কাছ থেকে৫ লাখ টাকা দাবি করে তা আদায় করেন। পরে অস্ত্র মামলায় তাকে রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করেন।মাসিলা গ্রামের পারভেজ আহমেদ সোহাগ নামে এক যুবককে তুলে এনে ৩২ ঘণ্টা আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক ও নির্যাতন করেন তিনি। এক পর্যায়ে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করেন। এরপরও তাকে ডাকাতি ও মাদক মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন বলে সোহাগের মা সাফিয়া অভিযোগ করেছেন।

যদিও সোহাগের মা সাফিয়া এলাকায় মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। সোহাগ, তার মা সাফিয়া, বোনসহ গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে চৌগাছাসহ বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মাদক মামলা রয়েছে।২৩ নভেম্বর সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মল্লিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তার কাছে ওসি পায়েল ১০ লাখ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন আব্দুল হামিদ মল্লিক। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয় বলেও অভিযোগ তার।১৭ ডিসেম্বর জীবন হোসেন লিপু নামে এক যুবকের বন্ধু বাবুল হোসেনের ছোট ভাই হারিয়ে গেলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জীবন খান অভিযোগ করেন, দুদিন পর ওসি বাবুলকে ডেকে নিয়ে জানান, হারানো ব্যক্তিকে উদ্ধারে অতিরিক্ত এসপির জন্য দুই লাখ টাকা লাগবে। নিরুপায় হয়ে বাবুল ৫০ হাজার টাকা দেন। পরে ওই হারানো ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্যরাই উদ্ধার করলেও ওসি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তারা টাকা ফেরত চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুল ও জীবনকেদালাল আখ্যা দিয়ে তাদের ছবি থানার নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দিয়ে প্রচার প্রচারনা চালায়। পরে মোবাইল ফোনেগুলি করার হুমকি দিয়ে তাদের চৌগাছা ছাড়তে বাধ্য করেন। এ ঘটনায় যশোরের পুলিশ সুপারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন জীবন খান।

সর্বশেষ শনিবার সকাল থেকে ৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ম্যাসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগ মাদ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওসি পায়েল একটি মোবাইলে কথা বলছেন আবার কখনো হাসতে হাসতে ডিভোর্সি ওই নারীকে বিভিন্নভাবে অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছেন।একপর্যায়ে নিজের শরীর ও বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন করেন ওসি পায়েল। এছাড়া অডিওগুলিতে অশালীন কথাবার্তা বলতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে ওই নারীকে এক রাতের জন্য পাঁচ হাজার টাকার প্রস্তাবও দেন তিনি।এসব বিষয়ে ভূক্তোভোগী ব্যক্তিরা মৌখিকভাবে পুলিশের বিভিন্ন উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি পায়েল হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। রোববার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেনের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন পায়েল হোসেন।

চৌগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, এসপি স্যারের মৌখিক নির্দেশে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ইন্সপেক্টর পায়েল হোসেনকে যশোর পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তবে তিনি কোনো লিখিত আদেশ পাননি।অভিযোগের বিষয়ে ওসি পায়েল হোসেন বলেন, আমাকে ফাঁসাতে একটি দালাল ও মাদক কারবারি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং আমাকে ট্যাপে ফেলা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ওসি পায়েলের কর্মকান্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিউএনবি/অনিমা/২৯ ডিসেম্বর ২০২৪,/রাত ৮:০১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit