এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাতিবিলা-হায়াতপুর আবাসন ২৫ ধরে সংস্কার না করায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি বলে দাবি করেন বাসিন্দারা। জানা যায়, উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা-হায়াতপুর গ্রামে ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিন্নমুল পরিবারের জন্য ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয় আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প (আবাসন)। টানা ২৫ বছর অতিবাহিত হলেও সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্তমানে আবাসনের বাসিন্দারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ফুটো-ফাটা মরিচা ধরা টিনের চালে পলিথিন দিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন পাড় করছেন।
এদিকে স্যানিটেশন ব্যবস্থা লাজুক সব টয়লেট গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পানির কলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আবাসনটি বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এর আগে দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে অনেক পরিবার আবাসন ছেড়ে অন্য জায়গায় ঠাই নিয়েছেন। আবাসনের টিনের চালে বড় বড় ফুটো ও ঘরের বেড়ার টিনগুলো পচে নষ্ট এবং ২০১৯ সালের আম্ফান ঝড়েকয়েকটি ব্যারাক দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আবাসনের প্রতিটি ঘরের চাল ও টিনের বেড়ায় ফুটো হয়েছে। এই বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ যেন তিন-চারগুন বেড়ে যায়। বৃষ্টি থেকে রক্ষায় টিনের ওপর পলিথিন দিয়ে রেখেছেন তারা। শীতকালেও প্রতিটি রুমে বৃষ্টির পানির মতো শিশির বিন্দু পড়ে বিছানাপত্র ও আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চলতি বর্ষাকালে অনেকে আবাসন ছেড়েছে। আবাসনে ৬০ টি পরিবার বসবাস শুরু করে কিন্তু বর্তমানে রয়েছে ২০টি পরিবার।
প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট নির্মাণ করা হলেও সংস্কারের অভাবে তা ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পলিথিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে কাঁচা টয়লেট বানিয়ে তা ব্যবহার করছেন। ফলে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। পানির কল টিউবওয়েল জুড়া-তালি দিয়ে সচল রয়েছে মাত্র ১টি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্প পূর্ণনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন আবাসনের বাসিন্দারা। আবাসনে বাসিন্দা জানান, তাদের কষ্ট কে শোনে। টানা বৃষ্টিতে টিনের ফুটো দিয়ে ঘরে হড়-হড় করে পানি ঢুকছে।
এই বয়সে এতো কষ্ট নিয়ে থাকতে চান না রোকেয়া বেগম (৫৮)। তাই দ্রুত আবাসনের ঘরগুলো ভেঙেনতুন ভাবে নির্মাণের দাবি জানান তিনি। একই কষ্ট নিয়ে ভাঙাচুরা আবাসনে রান্না-বান্নাসহ দিন পাড় করছেন জানু বেগম (৫৭), ফাতেমা বেগম (৫৪) ও সেফালী খাতুন (৪৫)সহ অনেকেই। পাতিবিলা-হায়াতপুর আবাসনের সভাপতি রাজিব হোসেন জানান, ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে আবাসনটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগযোগ করেছেন।
প্রতিশ্রুতি দিলেও পূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে আবাসনের ঘরগুলোর অবস্থা খুবই করুন। ইতিমধ্যে অনেক পরিবার অন্য জায়গায় চলে গিয়ে ঝুপড়ী করে বসবাস করছেন। যারা রয়েছেন এ পরিবার গুলোর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় জোড়াতালি দিয়ে কষ্টে জীবন যাপান করছেন। দ্রুত এই আবাসনটি নতুন করে নির্মাণের জোর দাবি জানান তিনি।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্মমিতা শাহা এ বিষয়ে জানান, পাতিবিলা-হায়াতপুর আবাসনের দুর-অবস্থার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। এই অর্থ বছরেই বরাদ্দ আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদী। বরাদ্দ আসলেই সেখানকার বসবাসরত প্রত্যেকটি পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিউএনবি/আয়শা/২৬ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৪:০০