খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর উপজেলার গঙ্গানগর আট শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা ও এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ একটি ব্যস্ততম বাজার। বাজারটি ৩টি উপজেলা ও ৫টি ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় সর্বক্ষণ জমজমাট থাকত। লুটপাটের আতঙ্কে ২৬ ফেব্রুয়ারী সোমবার থেকে সেই ব্যস্ততম বাজারের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। চিকন্দী পুলিশ ফাঁড়ি ও পালং থানা পুলিশের তৎপরাতায় পরিবেশ শান্ত থাকলেও ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক এখনও কাটেনি।
পুলিশ, স্থানীয় ও গঙ্গানগর বাজারের ব্যবসায়ী সূত্রে জানাগেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া-চিকন্দী, জাজিরা উপজেলার জয়নগর-মুলনা এবং নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত গঙ্গানগর বাজার। জুয়া, মাদক ও ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত জয়নগর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার (১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী) ধান্দাবাজ হালিম তালুকদার। তিনি স্থানীয় ভাবে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছেন। খবরটি জনসম্মুখে তুলে ধরতে ইতোমধ্যে তিনি নিজ বাড়িতে গরু কেটে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন।
পরবর্তীতে তিনি ভাড়াটে লোকজন নিয়ে গঙ্গানগর বাজারে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র প্রদর্শণ করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। বাজারের শান্তিপ্রিয় ব্যবসায়ীরা বাধা দেওয়ায় তাদের উপর হামলাও করেন মেম্বার হালিম তালুকদারের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। এই হামলায় অন্তত ৬ জন আহত হয়ে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ঘটনা খুনখারাপি ও লুটপাটের দিকে ধাবিত হতে পারে আশঙ্কায় জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম মিন্টু পুলিশে সংবাদ দেয়। সোমবার রাত থেকে গঙ্গানগর বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশীয় অস্ত্রসহ নুরুল আলম সরদার ও রাকিব মাদবর নামে দুই জনকে আটক করেছে।
জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম মিন্টু বলেন, হালিম তালুকদার আমার পরিষদের একজন মেম্বার। তবে সে একজন মাদকাসক্ত, জুয়ারী ও ধান্দাবাজ। সে বাজারে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করতে চেষ্টা করে। যুব সমাজের মাঝে মাদক ছড়িয়ে দিয়েছে। জমি ও বাজারের ভিটি মাপামাপি করে ঘুষের বিনিময়ে এক পক্ষকে সুবিধা দেয়। আমি তার অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা দেওয়ায় আমার নির্বাচনি প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছে। কয়েকদিন ধরে সে ভাড়া করা লোক নিয়ে গঙ্গানগর বাজারে ত্রাসের সৃষ্টি করে। ২৬ ফেব্রুয়ারী সোমবার বিকেল থেকে বাজারে প্রভাব বিস্তার ও লুটপাটের চেষ্টা চালায়। বিষয়টি আমি পুলিশে জানাই। সেই থেকে বাজারে পুলিশ অবস্থান করছে। নয়তো এতক্ষণে খুনখারাপি ও লুটপাট হয়ে যেত।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, হালিম মেম্বারের নেতৃত্বে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালায়। যে কোন সময় লুটপাট করতে পারে আতঙ্কে তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছে। গঙ্গানগর বাজারে পুলিশ মোতায়েন করার পর থেকে মেম্বার হালিম তালুকদার তার মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপণ করায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশীয় অস্ত্রসহ দুই জনকে আটক ও কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। লুটপাট আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
কিউএনবি /আয়শা/২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/বিকাল ৪:৫৫