স্পোর্টস ডেস্ক : দীর্ঘদিন থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকদের দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন সরফরাজ খান। বিশেষ করে টেস্ট দলে একটা সুযোগ পাওয়া তার ন্যয্য অধিকারে পরিণত হয়েছিল। রঞ্জি ট্রফিতে গত কয়েক মৌসুমে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন সরফরাজ। কিন্তু কিছুতেই জাতীয় দলের দরজাটা তার জন্য খুলছিল না। অবশেষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে তাকে স্কোয়াডে ডাকতে এক রকম বাধ্য হয়েছেন নির্বাচকরা। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে তো সরফরাজের দলে ডাক পাওয়াটাকে রীতিমতো ‘নির্বাচকদের দরজা ভেঙে ঢুঁকে পড়া’ বলে অবিহিত করেছেন।
২৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া সরফরাজ অবশ্য আলো কেড়েছেন অনেক আগেই। ভারতের হয়ে দুবার অংশ নিয়েছেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দুবারই দারুণ সফল ছিলেন তিনি। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্ধশতক হাঁকানোর রেকর্ড তার দখলেই। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের কথা এলে সরফরাজের পাশাপাশি মুশের খানের কথাও চলে আসে। চলতি অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন ১৮ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার।
চলতি বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশের ভাগ বসিয়েছেন ভারতের ওপেনার শেখর ধাওয়ানের রেকর্ডে। দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে মাত্র চার ম্যাচে ৮১.২৫ গড়ে ৩২৫ রান করে রান সংগ্রাহকের তালিকায় থাকা মুশের সম্পর্কে সরফরাজের সহোদর মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে বাবা ক্রিকেট কোচ নওশাদ খানের কাছেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি সরফরাজ-মুশেরদের। ক্রিকেটের ‘প্রজিডি’ হিসেবে দুই ভাই-ই একের পর এক চমক দেখিয়েছেন। ২০০৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে হ্যারিস শেফিল্ডের ম্যাচে রিজভি স্প্রিংফিল্ড স্কুলের হয়ে শচীন টেন্ডুলকারের ২১ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দেন সরফরাজ।
৪২১ বলে ১২ ছক্কায় ৪৩৯ রানের ইনিংস খেলে তাক লাগিয়ে দেন দেশে। তখন থেকেই তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মনে করা হত। অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়েও দারুণ সফল তিনি। ২০১৫ সালে ৫ মিলিয়ন রূপিতে সরফরাজকে দলে টানে আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। আইপিএল ইতিহাসেরই সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় তিনি। প্রথম মৌসুমেই প্রতিভার ঝলকানি দেখান। ১৩ ম্যাচে ১৫৬.৩৩ স্ট্রাইকরেটে ১১১ রান সংগ্রহ করেন। পরের আসরেও আলো ছড়ান। বর্তমানে দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেন সরফরাজ।
সরফরাজ ও মুশের যেভাবে আগাচ্ছেন তাতে অদূর ভবিষ্যতে দুই ভাইকে একসঙ্গে ভারতীয় জাতীয় দলে খেলতে দেখাটা খুব বেশি আশ্চর্যের বিষয় হবে না। চলমান অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে মুশের যা করছেন, বল হাতে তাই করছেন উবাঈদ শাহ। মাত্র ৪ ম্যাচে ১১.২৫ গড়ে ১২ উইকেট শিকার করে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনিই। টুর্নামেন্টজুড়ে তার বোলিং এ্যাকশন, গতি, সুইং, মেন্টালিটি, ম্যাচিউরিটি পাকিস্তানের এক তারকা পেসারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভারতের মাটিতে পাকিস্তান দল বোলিং আক্রমণে যে নাসিম শাহকে প্রচণ্ডভাবে মিস করছিল, তারই প্রতিচ্ছবি যেন উবাঈদ শাহ।
অবশ্য হওয়ারই তো কথা। একই মায়ের সন্তান যে নাসিম-উবাঈদ। পাকিস্তান জাতীয় দলের তারকা পেসার নাসিম শাহর সহোদর অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে আলোড়ন তোলা পেসার উবাঈদ। নাসিম-উবাঈদের ভাই আছেন আরও একজন। এই ভ্রাতাত্রয়ীর অন্যজনের নাম হুনাইন শাহ। ১৯ বছর বয়সী হুনাইন এই মুহূর্তে আছেন বাংলাদেশ। চলমান বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে খেলছেন এই পেসার। বাকি দুই ভাইয়ের মতো তিনিও দারুণ প্রতিভাবান। তাই পাকিস্তান দলে ভবিষ্যতে তারা তিনজনই একসাথে ডাক পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিউএনবি/আয়শা/৩১ জানুয়ারী ২০২৪,/বিকাল ৩:২৮