বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

বেকার থেকে সফল কৃষি উদ্যোক্তা নওগাঁর সাইদুল ইসলাম

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৯৭ Time View
নওগাঁ প্রতিনিধি :  উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁর ধামইরহাট আগ্রাদিগুন ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের সারাফাত হোসেন এর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩৬)। ২০১২ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর তিনি চাকরির পিছনে না ছুটে নিজে কিছু করার চিন্তা করেন। এই ভাবনা থেকে ২০২০ সালের শুরুর দিকে আগ্রাদিগুন স্থানীয় হয়রতপুর গ্রামের পাশে প্রথমে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলেন। সেখানে তিনি দার্জিলিং জাতের কমলার চারা কিনে এনে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। দীর্ঘ ৩ বছরের পরিচর্যার পর এ বছর প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কমলা এসেছে। এছাড়াও পরবর্তীতে বাগানে রোপণ করেন বারি-১ মাল্টা, বারি-৩ বারোমাসি জাতের মাল্টা, বরই, পেয়েরা, কাটিমন, আমরুপালি, বারি-৪ জাতের আম, কলাসহ ২০প্রকারের ফলের আবাদ  ইতিমধ্যে ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। তার মিশ্র ফলের বাগানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে ১০জন কৃষকের। বর্তমানে সারাফাতা এগ্রো নামে তার মিশ্র ফল বাগানের আয়তন ১০ একর। চলতি মৌসুমে ১৫থেকে ২০লাখ টাকার বিভিন্ন জাতের ফল বিক্রির আশা করছেন এই এই উদ্যোক্তা। তার এমন সফলতা দেখে প্রতিদিনই অনেকেই আসছেন বাগানটি ঘুরে দেখতে ও পরামর্শ নিতে।
সাইদুলের বাগানে ঘুরতে আসা মাহবুবুর রহমান ও আলিম হোসেন নামের দুই যুবক বলেন, আমরা পত্নীতলা উপজেলা থেকে এসেছি। বিশাল এই কৃষি বাগান দেখতে। নানা জাতের ফলের চাষ করা হয়েছে। তিন বছরেই তিনি সফল হয়েছেন। আমরা তার কাছে থেকে পরামর্শ নিলাম। বর্তমানে আমরা বেকার সময় পার করছি। আমরা চাকুরির পেছনে আর না ছুটে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবো।এ বিষয়ে কথা হয় সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে বা অন্যের অধিনে না থেকে নিজে কিছু করার ভাবনা থেকেই মিশ্র ফল বাগান তৈরির চিন্তা করেন। প্রথমে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাল্টা, বরই পেয়ারা এবং আমের চারা রোপণ করেন। তখন মাথায় আসলো যেহেতু নওগাঁ আমের জন্য বিখ্যাত, আম ছাড়া অন্য কোনো ফসল ফালানো যায় কিনা। তখন পরীক্ষামূলক নীলফামারী থেকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা কিনে এনে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে আমার বাগানে ২০জাতের নানা রকমের ফল রয়েছে। পাশাপাশি নানা জাতের মৌসুম ভিত্তিক সবজিরও চাষ করে থাকি।
সাইদুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিকে অনেকে ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। এলাকার আগে কেউ কল্পনা করে নাই এখানে এমন কৃষি প্রজেক্ট করা সম্ববনা। এখন অনেকেই আমার এই বাগান দেখতে এসে আগ্রহী হচ্ছেন। এবং চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নিজেরায় চারা তৈরি করছি এবং যারা চারা নিতে চেয়েছেন তাদেরকেও চারা দিয়ে থাকি। বর্তমানে আমি লাভের মুখ দেখেছি। চলতি মৌসুমে ২০লাখ টাকার ফল বিক্রি করার টার্গেট নিয়েছি। সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। কিছু নিজের জমি আছে আর এই বাগানের কিছু জমি চুক্তিভিত্তিক লিজ নেওয়া আছে। আমার এখানে ১০জন শ্রমিক কাজ করে তাদেরও কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হয়েছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা আছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকেও নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই অঞ্চল উচ্চ বরেন্দ্র-ভূমি শ্রেণির মধ্যে পড়েছে। এই জমি সমতল জমির চেয়ে উঁচু। বর্তমানে এই জমিগুলো কমলাসহ নানা জাতের ফল চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগি। সাইদুল ইসলামের বাগানে প্রায় ২০ জাতের ফলের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এমন বাগান করার। আমরা নিয়মিত তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকি।এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষি বিভাগ সব সময় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। কেউ এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে চাইলে কৃষি বিভাগ তাদেরকে স্বাগত জানায়। সেসব প্রশিক্ষণে ভূমি শ্রেণি অনুযায়ী কোন ফসল কোন জমিতে ভালো হবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যেসব উদ্যোক্তা ও বেকার যুবকরা কৃষিতে আসতে চায়, তাদের নিজ নিজ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে, সে কি ফসল করতে চায় সেটার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করলে আগামীতে কৃষি বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছি।

কিউএনবি/অনিমা/১৯ জানুয়ারী ২০২৪/বিকাল ৪:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit