শান্তা ইসলাম নেত্রকোনা : বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় পৌরসভা হচ্ছে নাগরিক জীবনের সবচেয়ে কাছের প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে নাগরিক সনদ, রাস্তা, ড্রেনেজ, পরিচ্ছন্নতা, কর আদায়, সামাজিক নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান—সবকিছুই পৌরসভার আওতাভুক্ত। অথচ দীর্ঘদিন ধরে দেশের অধিকাংশ পৌরসভা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিযোগ একটাই দুর্নীতি, হয়রানি, দেরি আর অদৃশ্য দেয়াল।
এই বাস্তবতার মাঝেই নেত্রকোনা পৌরসভা যেন ভিন্ন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আর এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছেন নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদার একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, যিনি দায়িত্বকে কেবল পদ নয়, বরং মানবসেবার অঙ্গীকার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আরিফুল ইসলাম সরদার বুঝতে পেরেছিলেন—এটি কোনো সাধারণ দায়িত্ব নয়। এটি একটি জনগোষ্ঠীর আস্থা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত দায়িত্ব। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি অফিসকেন্দ্রিক প্রশাসনের বাইরে গিয়ে মাঠপর্যায়ে নজর দেন।
পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক, চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তব অবস্থা যাচাই, নাগরিক সেবার জট কোথায়—এসব বিষয় খতিয়ে দেখা শুরু করেন। একজন পৌর কর্মকর্তা বলেন, স্যার যোগদানের পর প্রথম যেটা বদলে গেছে, সেটা হলো কাজের গতি আর জবাবদিহি। আরিফুল ইসলাম সরদারের প্রশাসনিক দর্শনের মূল কথা পৌরসভা মানেই জনগণের জন্য উন্মুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। এই দর্শনের প্রতিফলন দেখা যায় তার এক সাহসী সিদ্ধান্তে পৌরসভা কার্যালয়ে সাধারণ মানুষের অবাধ প্রবেশাধিকার। বর্তমানে নেত্রকোনা পৌরসভা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে লাগে না কোনো অনুমতি, তদবির বা দালাল। যে কেউ সরাসরি প্রশাসকের কক্ষে গিয়ে নিজের কথা বলতে পারেন।
একজন ভুক্তভোগী নাগরিক বলেন, আমি নিজেই অবাক হয়েছি। কোনো বাধা ছাড়াই স্যারের কাছে কথা বলতে পেরেছি। এই উন্মুক্ত দরজার নীতি পৌরবাসীর মধ্যে যেমন আস্থা তৈরি করেছে, তেমনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও দায়িত্ববোধ বাড়িয়েছে। নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এখন আরিফুল ইসলাম সরদারের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অসহায় মানুষ তার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন কখনো চিকিৎসা, কখনো অর্থনৈতিক সহায়তা, কখনো পরামর্শ।
তিনি কাউকে ফিরিয়ে দেন না। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলেন, স্যার শুধু কথা শোনেন না, কাজ করে দেখান। এই মানবিক আচরণ তাকে কেবল একজন প্রশাসক নয়, একজন অভিভাবকের মর্যাদা দিয়েছে। নেত্রকোনা পৌরসভার আওতাধীন মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান করে তিনি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন উন্নয়ন হবে সবার জন্য। এই পদক্ষেপ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করেছে। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পৌরসভা মানেই দুর্নীতির অভিযোগ এই ধারণাকে কার্যত ভেঙে দিয়েছেন আরিফুল ইসলাম সরদার। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।
ঘুষ, অনিয়ম বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে পৌরসভায় এক ধরনের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এখন কেউ নিয়ম ভাঙতে ভয় পায়। নেত্রকোনা পৌরসভার উচ্চমান সহকারী নন্দন কুমার দত্ত বলেন, স্যার সত্যিই একজন জনবান্ধব অফিসার। তার মতো প্রশাসক খুব কমই দেখা যায়। তিনি একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও জনপ্রতিনিধির মতো কাজ করছেন। এদিকে প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, আমি মানবসেবার ব্রত নিয়েই চাকরিতে এসেছি। নেত্রকোনা পৌরবাসীর জন্য যা করছি, তা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকেই করছি। তিনি আরও বলেন, একটি আধুনিক, দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক পৌরসভা গড়ে তুলতে চাই।
নেত্রকোনা পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ একবাক্যে স্বীকার করছেন—এই ধরনের একজন প্রশাসক দীর্ঘদিন থাকলে পৌরসভা হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক। তবে এরকম প্রশাসক থাকলে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ। নেত্রকোনা পৌরসভায় আরিফুল ইসলাম সরদারের নেতৃত্ব প্রমাণ কওে সততা, সদিচ্ছা ও মানবিকতা থাকলে একজন মানুষই একটি পুরো প্রশাসনিক কাঠামো বদলে দিতে পারেন। একটি আধুনিক পৌরসভা উপহার দিতে চাই নেত্রকোনা পৌরবাসীকে এই বক্তব্য এখন আর শুধু একটি বক্তব্য নয়, এটি বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলা এক প্রতিশ্রুতি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত জনাব আরিফুল ইসলাম সরদার একজন দক্ষ, সৎ ও দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে যে পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তিনি পৌরসভার সার্বিক উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সফলভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। আমি অত্যন্ত সন্তোষের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা এসেছে। নাগরিক সেবা সহজীকরণ, পৌরবাসীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে তিনি প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
তার নেতৃত্বে পৌরসভা কার্যালয় জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের সমস্যা তুলে ধরতে পারছে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জনাব আরিফুল ইসলাম সরদারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুণ। তিনি দরিদ্র, অসহায়, প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে থেকে নিয়মিত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে তার সহায়তা পৌর এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।সরকারের উন্নয়ন দর্শন ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিনি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
একজন প্রশাসক হয়েও জনপ্রতিনিধির মতো মানুষের পাশে থাকা তার কর্মদর্শনেরই প্রতিফলন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তার মতো সৎ ও মানবিক কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে নেত্রকোনা পৌরসভা একটি আধুনিক, দুর্নীতিমুক্ত ও টেকসই উন্নয়নের মডেল পৌরসভায় পরিণত হবে। জেলা প্রশাসন হিসেবে আমরা তার সার্বিক কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ১১:৫৫