এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় হঠাৎ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার কাঁচা ইট। উপজেলার ১৫টি ইট ভাটায় অসুময়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে কেটে রাখা প্রায় ১০ কোটি টাকার কাঁচা-ইট। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে ভাটাগুলোতে কেটে রাখা কাঁচাইট পানিতে ভিজে মাটিতে মিশে গেছে। ফলে উপজেলার ইট ভাটাগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে জানান ভাটা মালিকরা।
মৌসুমের শুরুতে এমন ক্ষতি হওয়ায় দারুণ চিন্তায় পড়েছেন মালিকরা। বুধবার ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত কখনো মুসলধারে ও কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। এতে উপজেলার ১৫টি ইটভাটায় কেটে রাখা কাঁচা ইট সব ভিজে মাটিতে মিশে গেছে। অনেকে পলিথিন দিয়ে ইট রক্ষার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। ফলে ব্যাপক ক্ষতি মুখে পড়েছে ইট ভাটা মালিকরা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার এইচএম ব্রিকস, আরকে ব্রিকস, দেওয়ান ব্রিকস, সানি ব্রিকস, কাশেম ব্রিকস, ঐশী মল্লিক ব্রিকস, মোল্লা ব্রিকস, সর্দার ব্রিকসসহ এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়নে শুকানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইটগুলো গলে গেছে। কিছু কাঁচা ইট খামাল করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য সাজানো ইটও গলে গেছে। শনিবার ভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা আবহাওয়া কিছুটা ভাল হওয়ায় ইট রক্ষায় চেষ্টা করছেন।
ইটভাটার মালিক আবুল কাশেম বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে পাড়নে (মাঠে) থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিতে প্রায় ৫০ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অগ্রাহায়ণের শেষের দিকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে এ উপজলায় নষ্ট হয়েছে সবকটি ইটভাটার কাঁচাইট। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এতে করে উপজেলার ১৫টি ইটভাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভাটার পাড়নে থাকা সব কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার ইটভাটা মালিকদের দাবি বৃষ্টিতে তাদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বছরে একটি ভাটায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। পোড়ানোর অপেক্ষায় থাকা প্রায় ২ কোটি কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে গলে গেছে। অনেক আধা শুকনা ইট বৃষ্টির পানিতে দাগ পড়েছে। ইটভাটাগুলোতে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় পাড়নে থাকায় ইট রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আবার কোনো কোনো ইট ভাটায় খামাল করে রাখা ইটে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখায় কিছুটা রক্ষা পেয়েছে। তবে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হওয়ায় এখন বাড়তি সময়, শ্রমিক ও টাকা গুনতে হবে মালিকদের। নষ্ট ইট পাড়ন থেকে সরিয়ে পুনরায় নরম করে ইট তৈরি করতে হবে। বৃষ্টিতে পাড়ন (মাঠ) নষ্ট হলেও কয়েকদিন বসেও শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে মালিকদের।
চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের ফাঁসতলা এলাকার ঐশী মল্লিক ব্রিকসের মালিক আব্দুল হামিদ মল্লিক বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে আমার ইটভাটায় পাড়নে থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিতে পাড়নে থাকা প্রায় ৫ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। লোর্ড ভেঙ্গে গেছে ও কয়লা ভিজে গেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব মাটি পট/পাড়ন থেকে সরিয়ে আবারও শোধন করে ইট তৈরি করতে বাড়তি টাকা খরচ হবে।
চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের সর্দার ব্রিকসের মালিক এস এম সাইফুর রহমান বাবুল বলেন, ভাটায় চুল্লিতে প্রতি রাউন্ডে প্রায় ৬ লাখ ইট পোড়ানো যায়। আর প্রতি বছর ইট পোড়ানো হয় প্রায় ৫০ লাখ পিস। গত বছর বৃষ্টিতে অল্প সংখ্যক কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। তবে এ বছর হঠাৎ বৃষ্টিতে চারটি পাড়নে থাকা প্রায় ১৬ লাখ পিস কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রমিক, মাটি ও বালুসহ প্রতি ইট তৈরিতে আনুষঙ্গিক খরচ পড়েছে প্রায় ৫ থেকে ৬ টাকা। সে হিসাবে প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে সাজিয়ে রাখা কিছু ইটও গলে নষ্ট হয়ে গেছে। পলিথিন দিয়ে খামাল করে রাখায় রক্ষা পেয়েছে প্রায় ২ লাখ কাঁচা ইট। তিনি জানান, গত দুই দিন থেকে শ্রমিকদের বসে বসে মজুরি ও খেতে দিতে হচ্ছে। মাঠ শুকাতে আরও ৫ দিন লাগবে। প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা মজুরিসহ খরচ হচ্ছে। সে হিসেবে ৫ দিনে মজুরিসহ খরচ হবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। হঠাৎ বৃষ্টিতে এ মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান তৌহিদুর রহমান বলেন, অসুময়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে
উপজেলার ১৫টি ইটভাটায় পাড়নে থাকা ইট নষ্ট, কয়লা ভিজে, শ্রমিকদের বসিয়ে রেখেও বেতনদিয়ে ও লোর্ড ভেঙ্গেসহ বিভিন্ন ভাবে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা পুশিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে।
কিউএনবি/আয়শা/০৯ ডিসেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৫:১২