বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

৫২ বছেরর চৌগাছাবাসীর বেদনার ক্ষতে আবারো নুনের ছিটা

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২৫২ Time View

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : দীর্ঘ ৫২ বছরেও নিজ উপজেলা থেকে এমিপ পাইনি চৌগাছাবাসী। নির্বাচনের পর নির্বাচন গেছে চৌগাছাবাসী কেবল বঞ্চিতই থেকে গেছে। বার বার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ধরনা দিয়েও চৌগাছা থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন নিয়ে আসতে পারেনি বড় তিন দলের নেতারা । অথচ দেশ স্বাধীনের পূর্বে পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরে চৌগাছা উপজেলার তিন তিনজন কৃতি সন্তান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারা হলেন উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের খান বাহাদুর আব্দুল আজিজ, চৌগাছা শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও ইছাপুর গ্রামের কৃতি সন্তান মোবারক আলী এবং সিংহঝুলি গ্রামের শহীদ মসিয়ূর রহমান। এদের মধ্যে শহীদ মসিয়ূর রহমান ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে এম এল এ নির্বাচিত হয়ে প্রাদেশিক সরকারের আইন ও বিচার বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার খ্যাত ও রাজনীতির ইতিহাসে সমৃদ্ধশালী এমন একটা উপজেলার মানুষকে কিভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে দুরে রাখা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ চৌগাছা উপজেলা। এক দুই বছর নয়, দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী ধরে চৌগাছার মানুষগুলোকে রাজনৈতক ভাবে দেউলিয়া করে রাখা হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর বিগত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ১১ টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চৌগাছা উপজেলা থেকে কোন প্রার্থী করেনি বড় বড় রাজনৈতক দলগুলো। ২৬ নভেম্বর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেন কিন্তু এবার চৌগাছা উপজেলা থেকে কোন নেতার ভাগ্যের শিকে ছেড়েনি।

এক তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, দেশ স্বাধীনের পর প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। তখন বৃহত্তর যশোরের এ আসন ছিল জাতীয় সংসদের ৮৩ তম আসন এবং যশোর- ৬। ১৯৭৩ সালের সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন তৎকালীন আওয়ামীলীগের বিশিষ্ট নেতা আবুল ইসলাম । এরপর ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় বৃহত্তর যশোরের এ আসন ছিল জাতীয় সংসদের ৮৭তম আসন এবং যশোরের ছিল ৬ নং আসন। সে নির্বাচনে যশোর শহর থেকে অ্যাডভোকেট বদরুল আলাকে ধার করে নিয়ে এসে প্রার্থী করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনিপ ) এবং এ্যাডভোকেট বদরুল আলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।এরপর তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। এ সময় জাতীয় সংসদে এ আসনের অবস্থান হয় ৮৬ এবং যশোর-২, সীমানা হয় ঝিকরগাছা উপজেলার ১১টি ও চৌগাছা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন অর্থাৎ ২২ টি ইউনিয়ন নিয়ে হয় এ আসন। এখন পর্যন্ত এ অবস্থান ঠিক আছে। এ নির্বাচনে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ঝিকরগাছা উপজেলার মকবুল হোসেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয় জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ঝিকরগাছা উপজেলার মীর শাহাদাতুর রহমান। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ মনোনীত ঝিকরগাছা উপজেলার অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ঝিকরগাছা উপজেলার অ্যাডভোকেট কাজী মিনরুল হুদা নির্বাচিত হন । একই বছর অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত ঝিকরগাছা উপজেলার অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আবারো নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত তথা চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচিত হন ঝিকরগাছা উপজেলার মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত ঝিকরগাছা উপজেলার মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচেন আওয়ামীলীগ মনোনীত ঝিকরগাছা উপজেলার অ্যাডভোকেট মিনরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেন আওয়ামীলীগ মনোনীত ঝিকরগাছা উপজেলার মেজর জেনারেল (অব:) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন নির্বাচিত হন।

আগামী ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চৌগাছা উপজেলা থেকে ৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক ওদুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান, সাবেক ছাত্র নেতা কামাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতিক ঝিকরগাছা উপজেলার ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিনকে দেওয়া হয়েছে। যারফলে চৌগাছা উপজেলার আওয়ামীলীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও কোন প্রকার আনন্দ উল্লাস করেনি নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের একটা বিরাট অংশ নেতৃবৃন্দকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ইতি মধ্যেদুই জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চৌগাছা থেকে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। উপজেলাআওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান জানান আমি নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ।শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটা দেখার জন্য আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।

 

 

কিউএনবি/অনিমা/২৮ নভেম্বর ২০২৩/সকাল ১০:৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit