বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বর্তমান সময়ের এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেই নেত্রকোনা পৌরসভা যেন ভিন্ন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে নেত্রকোণায় সক্ষমতা উন্নয়ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত দুর্গাপুরে বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল দৌলতপুর সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক ঢাবিতে ‘ডিকলোনাইজেশন অ্যান্ড মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু চৌগাছায় পানিতে ডুবে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু চৌগাছায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধুর আত্মহত্যা চৌগাছায় আগুনেপুড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু নাভারন আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরির তিন কর্মকর্তার অপসরন দাবিতে মুল গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ নোয়াখালীতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, শীর্ষ সন্ত্রাসী দেলু গ্রেপ্তার

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৭২ Time View

 স্বাস্থ্য ডেস্ক : চিকিৎসা বিজ্ঞানে যত বড় বড় আবিষ্কার বা উদ্ভাবন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মোড় ঘোরানো একটি ছিল জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক, যা মূলত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এটি এমন কিছু ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস করে দেয় যা শরীরের জন্য উপকারী।

তার মানে এই নয় যে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। চিকিৎসক পরামর্শ দিলে নিয়ম মেনে অবশ্যই ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করতে হবে। কিন্তু এর ফলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে সে ব্যাপারে বাড়তি কিছু যত্নেরও প্রয়োজন আছে।

জেনে নিন, ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কী পরামর্শ দিয়েছেন।

ভালো ব্যাকটেরিয়া, খারাপ ব্যাকটেরিয়া

ব্যাকটেরিয়া নামটা শুনলেই মনে হয় এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মানবদেহে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।

যার কিছু ভালো আর কিছু খারাপ। এই খারাপ/ভালো ব্যাকটেরিয়া শরীরকে একটি ভারসাম্যের মধ্যে রাখে।

কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা। এটা ভালো না খারাপ সেটা অ্যান্টিবায়োটিক বুঝতে পারে না।

তাই কোনো রোগী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে শুরু করলে তার শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়াও নষ্ট হয়ে যায়।

এতে শরীর তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারায়। ফলে সবচেয়ে সাধারণ যে দু’টি সমস্যা দেখা দেয় তা হল ডায়রিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ।

ডায়রিয়া
শরীরে যেসব ব্যাকটেরিয়া আছে তার বেশিরভাগই আমাদের পাচনতন্ত্রে থাকে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো খাবার হজম করা থেকে শুরু করে ক্ষতিকর ভাইরাস, পরজীবী থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক অন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে এবং ভাল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।

যার ফলে রোগীর মারাত্মক ডায়রিয়া, বদহজম, বমি বমি ভাব, জ্বর, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, মাথা ঘোরানো, ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

করণীয়

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে পেটে সমস্যা দেখা দিলে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার।

এসব খাবার অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার একটি সুস্থ ভারসাম্য ফেরাতে, এক কথায় পেটকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।

এক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ‘দই’। তবে দইটি যেন অবশ্যই রং ও চিনিমুক্ত হয়। এতে হজম প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর হবে।

এছাড়া অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ফেরাতে প্রিবায়োটিক যুক্ত খাবারও কাজে দেবে। প্রিবায়োটিক হচ্ছে প্রোবায়োটিকের উল্টো।

প্রিবায়োটিক খাবারে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে যা সহজে হজম হয় না, সময় লাগে।

কাঁচা কলা, ঠান্ডা ভাত, সেদ্ধ ঠান্ডা আলু, আটার রুটি, পাস্তা, ওটস, বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন ছোলা, মসুর, কিডনি বিন, এছাড়া মটরদানা, পেয়াজ, রসুন, ভুট্টা, কাজু, পেস্তা বাদাম, ইত্যাদি প্রিবায়োটিক যুক্ত খাবারের উৎস।

সেইসঙ্গে বিভিন্ন ফল যেমন তরমুজ, ডালিম, খেজুর, ডুমুর, জাম্বুরা ও শাক, বাঁধাকপি কাজে দেবে।

এসব খাবার অন্ত্রের প্রাচীরকে সুগঠিত করে তোলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অন্ত্রের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে শরীরের ভারসাম্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ খানিকটা সময় লাগে।

অ্যান্টিবায়োটিকের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুনরুদ্ধার করতে অনেকের প্রায় ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লেগেছে বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে।

এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করা, বিশেষ করে হাঁটাহাঁটি বা দৌড়ানো, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ফেরাতে সাহায্য করবে।

ছত্রাক সংক্রমণ

ছত্রাক সংক্রমণ বা ইস্ট ইনফেকশনে মূলত নারীরা ভুগে থাকেন।

নারীদের যোনিপথে যে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, তা ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কাজ করে।

কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে ওই ব্যাকটেরিয়া যখন মরে যায়, তখন সহজেই যোনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয়।

এমনটা হলে নারীদের উচিত হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

ইস্ট ইনফেকশন হলে যোনি ও এর আশেপাশে তীব্র চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়। বিশেষ করে সহবাসের সময় ও প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করে। অনেক সময় রক্তও যেতে পারে।

সেইসাথে পানির মতো পাতলা বা পনিরের মতো ভারী স্রাব হয়। যোনিপথে ফুসকুড়ি ও তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

করণীয়

অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার মধ্যেই কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়ার সাথে সাথে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কথা চিকিৎসককে জানাতে হবে।

এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল বা ছত্রাকনাশক মলম বা ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সেইসাথে নারীদের উচিত হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, নিয়মিত পরিষ্কার ও শুকনো সুতির অন্তর্বাস পরা এবং যেটাই পরবেন সেটি যেন শরীরের সাথে লেগে না থাকে, যথেষ্ট ঢিলে ঢালা হয়।

প্রতিদিন কয়েকবার, বিশেষ করে, প্রতিবার টয়লেট শেষে গরম পানিতে যোনিপথ পরিষ্কার করে নিতে হবে।

এছাড়া গোসলের সময় বালতিতে কিংবা বাথটাবে গরম পানি পূর্ণ করে সেখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে সেক দেয়া যেতে পারে। এটি খুব ভালো কাজ করে।

দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা পোশাকে থাকা যাবে না। যেমন সাঁতারের পোশাক বা ঘামে ভেজা পোশাক দ্রুত বদলে ফেলতে হবে।

তবে কোনও অবস্থাতেই যোনিপথ সাবান পানিতে ধোয়া যাবে না, বাজারে অনেক ধরনের ইন্টিমেট ওয়াশ রয়েছে। চিকিৎসকরা সেগুলো ব্যবহার করতেও মানা করেছেন।

সেইসাথে যেসব টিস্যু বা স্যানিটারি প্যাড রঙিন বা সুগন্ধিযুক্ত, সেগুলো ব্যবহার করাও এড়িয়ে যেতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে আরও দুটি সমস্যা হয় যা গুটিকয়েকের মধ্যে দেখা যায়।

আলোক সংবেদনশীলতা

অ্যান্টিবায়োটিক ত্বককে সাময়িক সময়ের জন্য সূর্যালোকের প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। এই অবস্থাকে ফটোসেনসিটিভিটি বলে।

ফটোসেনসিটিভিটির ফলে ত্বক অল্প সময়েই রোদের সংস্পর্শে পুড়ে যায়, ত্বক বিবর্ণ হয়ে পড়ে, অনেক সময় ফোস্কা বা প্রদাহ দেখা দিতে পারে, অনেকের রোদে গেলে চুলকানি হয়।

এক্ষেত্রে উচিত হবে, যতোটা সম্ভব সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে, সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সময়ে। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।

সূর্যের সংস্পর্শ সীমিত করতে প্রতিরক্ষামূলক পোশাক যেমন ছড়ানো টুপি, লম্বা হাতা আর পুরো পা ঢাকা পোশাক ও জুতা পরা, রোদে গেলে সানগ্লাস পরা।

কিডনি রোগ
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের মতে, কিডনি শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অবশিষ্টাংশ ফিল্টার করে বের করে দেয়।

যখন কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন এই ওষুধগুলি জমা হতে থাকে যা কিডনিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার আগে চিকিৎসকরা তাদের কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে থাকেন।

এক্ষেত্রে রোগীদেরও উচিত হবে চিকিৎসককে নিজের কিডনি জটিলতার সম্পর্কে জানানো।

অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয় ভিন্ন ভিন্ন একাধিক ওষুধের মিশ্রণে। এতে দেখা যায় একেকটি উপাদান শরীরে একেক ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে অনেকের গলা, গালে, মুখের তালুতে বা জিহ্বায় সাদা দাগ পড়তে পারে। খাওয়ার সময় বা গিলে ফেলার সময় ব্যথা হয় এবং দাঁত মাজার সঙ্গে রক্তপাত হয়।

এছাড়া শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, ফুসকুড়ি, ঠোঁট/মুখ/জিহ্বা ফুলে যাওয়ার মতো অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়।

তবে এ ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা খুবই কম। তারপরও যদি দেখা দেয় বিন্দুমাত্র দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বন্ধ করে দিলে অর্থাৎ এর কোর্স সম্পন্ন হলে এই সমস্যাগুলো ঠিক হতে শুরু করে।

যারা ইতোমধ্যে নানা ধরণের ওষুধ নিচ্ছেন যেমন, গর্ভ-নিরোধক ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে বিষয়টি চিকিৎসককে জানানো দরকার।

কারণ অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে অন্য ওষুধের বিক্রিয়ায় নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের সময় মদপান করলে ওষুধের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়; সেইসাথে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

 

কিউএনবি/অনিমা/২৭ নভেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৫:৪২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit