শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন

মুমিন যেভাবে দুঃখ-কষ্ট লাঘব করে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৯৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : পার্থিব জীবনে বিপদ-আপদ মানুষের নিত্য সঙ্গী। এর মাধ্যমে আল্লাহ মুমিন বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। তবে আল্লাহ মুমিনদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার কিছু উপায়ও বর্ণনা করেছেন। বিশেষত আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং পরকালীন পুরস্কারের প্রত্যাশা মুমিনকে বিপদে-আপদে ভেঙে পড়তে দেয় না।

যে বিশ্বাস মুমিনের কষ্ট লাঘব করে

১. প্রতিদান লাভ : মুমিন তার ওপর আপতিত দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রতিদান প্রত্যাশা করে। কেননা হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয়বস্তু দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু (প্রতিদান) নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২৪)

২. পাপ মার্জনার প্রত্যাশা : মুমিন তার বিপদের বিনিময়ে পাপ মার্জনার প্রত্যাশা করে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন নারী-পুরুষের ওপর, তার সন্তানের ওপর ও তার ধন-সম্পদের ওপর অনবরত বিপদ-আপদ লেগেই থাকে।

সবশেষে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৯)

৩. ভাগ্যে বিশ্বাস : মুমিন বিশ্বাস করে জীবনের সুখ ও দুঃখ সব কিছুই মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার আগে তা লিপিবদ্ধ থাকে। আল্লাহর পক্ষে তা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২২)

৪. আল্লাহ জুলুম করেন না : বান্দার জন্য দুঃখ-কষ্ট নির্ধারণ করে আল্লাহ তাঁর প্রতি জুলুম করেননি; বরং এতে নিশ্চয়ই কোনো কল্যাণ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রতিপালক! তাঁর বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা, আয়াত : ৪৬)

৫. ধৈর্য ধরলে পুরস্কার : বিপদে-আপদে মুমিন যদি ধৈর্য ধারণ করে, তবে আল্লাহ তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ১০)

৬. নিজের কৃতকর্মই দায়ী : পার্থিব জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদের জন্য বান্দার নিজের কৃতকর্মই বেশি দায়ী।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৩০)

৭. কল্যাণের আশা করা : পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্ট যা মানুষ পছন্দ করে না, তার অন্তরালেও কোনো কল্যাণ থাকতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)

৮. সুদিন দূরে নয় : আল্লাহ মুমিনদের কষ্টে রাখতে চান না; বরং তিনি তাদের জীবন সহজ করত চান। তাই দুর্দিনের পর সুদিন আসবে এটা মুমিনের বিশ্বাস। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি সহজতা চান, তিনি তোমাদের প্রতি কঠোরতা চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আছে স্বস্তি।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৫)

৯. দুঃখ-কষ্ট অস্বাভাবিক নয় : দুঃখ-কষ্ট মানবজীবনেরই অংশ। পৃথিবীর সব মানুষেরই কিছু না কিছু দুঃখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, অনুরূপ আঘাত তাদেরও লেগেছিল। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ মুমিনদের জানতে পারেন।’ (সুরা আলে ইরমান, আয়াত : ১৪০)

১০. নবী-রাসুলগণও কষ্ট ভোগ করেছেন : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসুলগণ। পৃথিবীতে তাঁরাও বহু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। তাই বিপদে পড়ার অর্থ হতভাগ্য হওয়া নয় বা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়। যেমন ইয়াকুব (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনঃস্তাপে ক্লিষ্ট।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৪)

আর আইয়ুব (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এবং স্মরণ কোরো আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)

দুঃখ-কষ্টে মুমিনের করণীয়

মুমিন যখন দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হবে, তখন নিম্নোক্ত কাজগুলো করবে।

১. আল্লাহমুখী হওয়া : কোনো সংকটে পড়লে মুমিনের প্রথম কাজ হলো আল্লাহমুখী হওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আপতিত হলো তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের চোখে শোভন করেছিল।’ (সুরা আনআম, আয়াত :  ৪৩)

২. আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা : বিপদ থেকে মুক্তির ব্যাপারে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘আমি বান্দার সঙ্গে আমার প্রতি তার ধারণার অনুরূপ আচরণ করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৫০৫)

৩. অবিরাম দোয়া করা : অবিরাম দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনের বিপদ ও সংকট দূর করে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘বরং তিনিই আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ দূর করেন।…’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬২)

৪. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা : ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা বিপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)

৫. ধৈর্যধারণ করা : যেকোনো বিপদ ও সংকটে মুমিন ধৈর্যহারা হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কত চমৎকার। তার জন্য শুধুই কল্যাণ—কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। যদি তার জন্য কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে তবে সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্যধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

কিউএনবি/অনিমা/২৬ নভেম্বর ২০২৫/দুপুর ১:৩৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit