মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

ফুলগাজী-পরশুরামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩
  • ৩৬৩ Time View

ডেস্ক নিউজ :  টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে সৃষ্ট বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মুহুরী নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে উজান থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশের গতি কমেছে। তবে এখনও দুই উপজেলার ২০টি গ্রামে পানি রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বর্তমানে মুহুরী নদীতে পানি বিপৎসীমার ২০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই কিলোমিটার এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে। এ ছাড়া ২০টি গ্রামের গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে আছে। ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

গেল সোমবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজীর দুটি স্থানে ও দুপুরে পরশুরামের একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলার ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়।

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। বাঁধভাঙা পানিতে তিন শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য চাষীদের অবকাঠামো।

কৃষি বিভাগ জানায়, সহসা পানি না নামলে জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া জেলায় ১০ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে।  

পরশুরামের মৎস্যচাষি আকবর হোসেন জানান, চাষের তিনটি পুকুরে অন্তত ১০ লাখ টাকার পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিল। বাঁধভাঙা পানিতে পুকুর ভেসে চোখের সামনেই সব মাছ চলে গেছে। কীভাবে খাদ্যের ডিলারদের টাকা পরিশোধ করব জানি না। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি।  

ফুলগাজীর কৃষক কবির আহম্মদ বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে সেচ দিয়ে দুই একর জমিতে আমন লাগিয়েছিলাম। কিন্তু গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে আমাদের স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে গেছে৷ আজকালের মধ্যে পানি না সরলে রোপা আমন গাছ পচে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

শুক্রবার সকালে আঞ্চলিক সড়কে চলাচলকারী আতাউর রহমান বলেন, মূল সড়কে পানি জমে গাড়ি চলাচল না করায় প্রায় ২ কিলোমিটার পানিতে হেঁটেছি। কোমর পর্যন্ত ভেজা কাপড়ে এতক্ষণ কীভাবে থাকব, জানি না।  

পরশুরাম সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাবিব উল্লাহ জানান, পরীক্ষার আর মাত্র ছয়দিন বাকি। চারিদিকে থৈই থৈই পানি। কলেজে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে। পানি ভেঙে কীভাবে কার্ড সংগ্রহ করব বুঝতে পারছি না। ঘরে পানি, সড়কে পানি। পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১৭ আগস্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে কীভাবে যাব, জানি না।  

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, দুই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজারেও বেশি মানুষ পানিবন্দি। বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। ১০ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজি ক্ষেতও পানিতে নিমজ্জিত। সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৩৭৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তা দেওয়া হবে।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার জানান, উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে এদিকেও প্লাবন বন্ধ হয়ে যাবে। পানির বেশি গতির কারণে বাঁধগুলোতে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না। তিনটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ অগাস্ট ২০২৩,/বিকাল ৩:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit