বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ‘২০২৩ সালে এই প্রথম রেকর্ড করে মাত্র পাঁচ মিনিট বিলম্বে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ৪টা ২৫ মিনিটে আখাউড়া প্রবেশ করলো। ডাবল লাইনের সুবিধা হয়ে গেছে। আলহামদুল্লিাহ।’- ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে ট্রেন ইনফরমেশন’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে এমনটাই লিখেছেন জাবেদুল আলম মাহিন।স্থানীয় একাধিক সূত্রে বিষয়টির নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।
ক্রসিংয়ের কারণে কুমিল্লা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ট্রেনের যে বিলম্ব হতো সেটা কাল হয়নি। কেননা, ওই পথে মঙ্গলবার থেকে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন চালু হয়েছে। যে কারণে শুধু মহানগর এক্সপ্রেসই হয় এ পথের অন্যান্য ট্রেনগুলোও ক্রসিংয়ে না পড়ার সুবিধা পেয়েছে। মঙ্গলবার অনানুষ্ঠানিক চালুর পর প্রথমবারের মতো কসবা এলাকায় ডাবল লাইনে ক্রস হয়েছে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী।সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার আখাউড়া-লাকসাম ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়্যালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। এ উপলক্ষে কুমিল্লার লাকসামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলথের ৩২১ কিলোমিটারে আর কোনো ক্রসিং থাকবে না। যে কারণে ট্রেনের পরিচালন সময় ২০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো কমে আসবে।
সূত্র মতে, নতুন এ পথে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ এ দুই ধরনের ট্রেনই চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে এই পথে মোট ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে এ পথ দিয়ে ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচলের সক্ষমতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে মালবাহী কনটেইনার চলাচলেরও সক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়বে। ছয় হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্প ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্পের নির্মাণকাজের চুক্তি হয় ২০১৬ সালের ১৫ জুন। ওই বছরের ১ নভেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে লাকসাম পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ডাবল লাইন নির্মাণ ও বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের পুরো টাকার মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে চার হাজার ১১৮ কোটি ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এক হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। আর সরকারের অর্থায়ন থাকছে এক হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ ২২ হাজার টাকা।করোনসহ নানা কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হয়। এরই মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদা নদী রেলসেতু নির্মাণ কাজে বাধা দেয়। সীমান্তের দেড়শ’ গজের মধ্যে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ হওয়ায় এতে আইন লংঘন হচ্চে বলে বিএসএফ অভিযোগ করে। প্রথমে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আপত্তি তোলা হয়। এতে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। পরে কিছুদিন কাজ চললেও ওই বছরের ১০ জুন থেকে আবার কাজ বন্ধ করে দিতে হয়।
এ অবস্থায় গত বছরের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের আলোচনার ভিত্তিতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হলেও ১৩ দিনের মাথায় তা বন্ধ করতে হয়। তবে কসবা স্টেশনের নির্মাণকাজ করা যায়নি। অথচ এমন নয় যে পথটি নতুন। ১৮৯০ সাল থেকে বিদ্যমান রেল ও স্টেশনে নতুন করে কাজ শুরু করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাঝে বেশ কিছু চিঠি চালাচালি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গত ১২ মার্চ থেকে উল্লেখিত অংশে বিনা বাধায় কাজ শুরু করা হয় এবং দ্রোতই সেটি করা হয়।এ বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদেরকে জানান, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/২০ জুলাই ২০২৩,/সকাল ১০:৩৮