সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

নিরপেক্ষ অবস্থান ছেড়ে কেন ন্যাটোতে সুইডেন-ফিনল্যান্ড

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩
  • ১৬৩ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ডের পথ ধরে এবার সুইডেনও যোগ দিতে চলেছে ন্যাটোতে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুইডেনের ব্যাপারে তার দেশের আপত্তি তুলে নেয়ার পর এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার পথ খুলে গেল সুইডেনের জন্য।

ফিনল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে এই পশ্চিমা জোটে যোগ দেয় গত এপ্রিলে, তাদের নিয়ে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১।

নরডিক অঞ্চলের এই দুটি দেশ বহু দশক ধরে তাদের সামরিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করলো, তারপর এই দুটি দেশ তাদের অবস্থান বদলায়। ইউক্রেন যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় মহাদেশে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করা হয়।

এখন কেন ন্যাটোতে যাচ্ছে?

উত্তর ইউরোপে একটা দীর্ঘ সময় ধরে যে ধরনের স্থিতিশীলতা ছিল, ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর তা ভেঙ্গে গেছে। এর ফলে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশ এখন মনে করছে তাদের দেশের নিরাপত্তা এখন বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে।

সাবেক ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার স্টাব বলেছেন, গত বছর যখনই রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে আক্রমণ চালালো, তখনই আসলে ঠিক হয়ে গেল যে ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে ঢুকবে।

ফিনল্যান্ডের অনেক মানুষকে এই ঘটনা আগের ভীতিকর ইতিহাস মনে করিয়ে দিল।

সোভিয়েতরা ১৯৩৯ সালের শেষভাগে ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেছিল। তিন মাস ধরে ফিনিশ সেনাবাহিনী রুশদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ যুদ্ধ চালায়। যদিও তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল সোভিয়েতদের চেয়ে অনেক কম। ১৯৪০ সালের মার্চ পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের বাহিনীটিকে ছিল। কিন্তু ফিনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কারেলিয়া দখল করে নেয় সোভিয়েত রাশিয়া।

ফিনল্যান্ড হয়তো রাশিয়ার দখলে যায়নি, কিন্তু নিজ দেশের দশ শতাংশ সীমানা তারা হারিয়েছিল।

“ইউক্রেন যুদ্ধ দেখে মনে হচ্ছিল সেই পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে,” বলছিলেন ইউনিভার্সিটি অব হেলসিংকির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইরো সারকা।

ফিনল্যান্ডের মানুষ তখন রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের ১,৩৪০ কিলোমিটার সীমানার দিকে তাকাচ্ছিল আর ভাবছিল, “এটা কি আমাদের সঙ্গেও ঘটতে পারে?”

সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেনের মনে হচ্ছিল তারা হুমকিতে আছে।

সুইডেনের সামরিক দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে ২০১৩ সালে যখন রাশিয়ার বোমারু বিমান স্টকহোমের ওপর আক্রমণের একটি মহড়া পরিচালনা করছিল। তখন সুইডেনকে ন্যাটোর সাহায্য চাইতে হয় রুশদের তাড়াতে।

২০১৪ সালে সুইডেনের মানুষ একটি খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায়। স্টকহোম দ্বীপপুঞ্জের কাছেই অগভীর পানিতে নাকি রাশিয়ার সাবমেরিন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সুইডেনে ২০১৮ সালে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনীর একটি প্রচারপত্র পাঠানো হয়। ‘যদি যুদ্ধের মতো সংকট তৈরি হয়” তখন কী করতে হবে তার বর্ণনা ছিল এই প্রচারপত্রে। ১৯৯১ সালের পর এরকম প্রচারপত্র বিলির ঘটনা এটাই প্রথম।

ন্যাটো কি সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পারবে?

আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের এরকম নিরাপত্তার গ্যারান্টি এখনই আছে। অন্যদিকে সুইডেনও শীঘ্রই এরকম অঙ্গীকার পাবে। কারণ ন্যাটোর কোন একটি দেশ আক্রান্ত হলে, চুক্তি অনুযায়ী সব দেশকে সেই দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ফলে নরডিক এবং বাল্টিক অঞ্চলের প্রতিরক্ষার ব্যাপারটি এখন আরও পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল।

তবে এই দুটি দেশেই, বিশেষ করে সুইডেন, জনগণের সংখ্যালঘিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ মনে করে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পর বরং এর উল্টো প্রভাব পড়বে।

সুইডিশ পিস এন্ড আরবিট্রেশন সোসাইটির ডেবোরাহ সলোমন বলেন, পরমাণু অস্ত্র দিয়ে শত্রুপক্ষকে নিরস্ত করার নেটোর কৌশলটি বরং উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করছে। তার মতে, এর ফলে শান্তি প্রচেষ্টার পথ জটিল হচ্ছে, এবং সুইডেনকে তা আরও নিরাপত্তাহীন করে তুলছে।

আরেকটি আশংকা হচ্ছে, এই জোটে যোগ দেয়ার মাধ্যমে সুইডেন বিশ্বে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আন্দোলনে তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা হারাতে পারে। ন্যাটোর ব্যাপারে সুইডেনের যেসব মানুষ সন্দিহান, তারা ১৯৬০ হতে ১৯৮০র দশকের মধ্যবর্তী সময়ের কথা স্মরণ করছেন। তখন সুইডেন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টায় মধ্যস্থতার জন্য তার নিরপেক্ষ অবস্থানকে কাজে লাগিয়েছিল।

মিজ সলোমন বলেন, ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার মানে হলো সুইডেনকে এই ভূমিকা পরিত্যাগ করতে হবে।

তবে ফিনল্যান্ডের নিরপেক্ষতা ছিল ভিন্ন ধরনের। কারণ তাদের এই নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হয়েছিল ১৯৪৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এক ‘মৈত্রী চুক্তি’তে চাপিয়ে দেয়া শর্তের কারণে। তখন ফিনল্যান্ডের টিকে থাকার জন্য এবং তাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এটিকে একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হতো।

হেনরিক মেইনানডার বলেন, সুইডেনের জন্য এই নিরপেক্ষতা ছিল তাদের পরিচয় এবং আদর্শের প্রশ্ন। অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের বেলায় এটি ছিল টিকে থাকার প্রশ্ন। তিনি বলেন, সুইডেন যে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পেরেছিল, তার কারণ হচ্ছে তারা ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য বাল্টিক দেশকে ‘বাফার জোন’ হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর ফিনল্যান্ড তার নিরপেক্ষতার অবস্থান থেকে সরে আসে। তখন তারা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকাতে শুরু করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা শুরু করে।

কিউএনবি/অনিমা/১২ জুলাই ২০২৩,/রাত ১১:২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit