রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন

সাবরিনা আরজুমান্দ এর জীবনালেখ্যঃ আমার ছোট ছেলে

সাবরিনা আরজুমান্দ, চিকিৎসক।
  • Update Time : শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৬৬ Time View

আমার ছোট ছেলে
———————–

ছোট ছেলের বয়েস দুই বছর। সে জন্মের পর আগে থেকেই ঘরে অলরেডি উপস্থিত তিন ভাইবোন দেখে বিস্মিত, যারপরনাই আনন্দিত এবং প্রচন্ডভাবে উৎসাহিত। এর ফলে মাশাআল্লাহ্ একবছরের ভেতরেই সে ছোট ছোট বাক্যে কথাবার্তা বলা থেকে শুরু করে পুরা হাঁটাচলা, সিঁড়ি বাওয়া ইত্যাদি সব শিখে বসে আছে।

সে এমন দুষ্টু যে সারাদিন সকলকেই তার পেছনে পাহারাদার হয়ে ঘুরতে হয়। খেলনার প্রতি তার আগ্রহ। যাবতীয় আর সকল বিষয়ে তার সীমাহীন আগ্রহ। একদিন দুদিনেই সে খেলনাপাতির চেহারা বদলে ফেলতে খুবই পারদর্শী।

তার দুএকটা কর্মযজ্ঞের কথা বলা যাক।

বই খাতা/ কলম/পেন্সিল ইত্যাদি সবকিছু টেবিল থেকে ফেলে দেয়া, ভাইবোনের স্কুলব্যাগ থেকে জিনিসপত্র গায়েব করে দেয়া, যেকোন ড্রয়ার খুলে সব বের করে ফেলা, বোনদের স্কার্ফ আর জামা গায়ে দেয়া, ল্যাপটপ/ সেলফোন/আইপ্যাড/ট্যাবটুব সবকিছু ফেলে দেয়া, বালিশপত্র/ ব্ল্যাঙ্কেট ফেলে দেয়া, আলনা/ওয়ারড্রোব এর কাপড় চোপড় ফেলে দেওয়া, সুযোগ পাওয়ামাত্র বাথরুমে ঢুকে ঘরের দিকে শাওয়ার তাক করে পানি ছিটানো,পানি নিজে ঘাটাঘাটি করা এবং পাডল মনে করে লাফঝাফ দেয়া, ফ্রিজ খুলে একটার পর একটা ডিম ভেঙে ফেলা, পানির বটল বের করে ঘরে পানি ফেলা, প্রায় সবকটা আপেলে একটা দুইটা কামড় দিয়ে রেখে দেওয়া, কলা চাপ দিয়ে ভর্তা বানানো, হাতে পেলেই বাবার মানিব্যাগ থেকে টাকা পয়সা/কার্ডস ইত্যাদি সব ছিটিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। আরেকটু ছোট থাকতে হঠাৎ পেয়ে যাওয়া জুতাটুতা কামড়ানো ব্যাপার ছিলোনা তার জন্য।

ইদানীং চেয়ার এনে এনে সম্ভবপর উচ্চতায় থাকা সবকিছুই সে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ছুরি আর সিজার দেখলেই সেগুলো নেওয়ার জন্য তার লাফালাফি দেখার মতোন। আবার, বেড়ালের খাবার পানি ফেলে দেয়ার সাথে সাথে সে পানিগুলো খেয়েও ফেলতে উদ্যোগ নেয় প্রায়ই,কয়েকবার নিশ্চয়ই খেয়েছেও কেউ পৌঁছানোর আগেই। এগুলি নমুনামাত্র।

নরমালি ছেলে বাচ্চারা যে এখান থেকে সেখান থেকে লাফঝাঁফ দিতে থাকে সেগুলোও সে যেমন করতেই থাকে, আবার চেয়ারটেবিল টানাটানি, সোফাযুদ্ধ, সু্যোগ পেলে স্টোভে /অভেনের নবটা ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করা, ওয়াশিং মেশিনে খেলনপাতি, কলম, এমনকি হাতের কাছে থাকা নতুন আনা জুতা ঢুকিয়ে দেয়া এগুলোও তেমনি আছে। ঘরে তেল, ক্রিম/লোশন/জেল/পাউডার কিছুই তিনি টিকতে দেননা, সব ঢেলে শরীরময় এবং ঘরময়। অন্যদিকে সসজাতীয় কিছু পেলেই শেষ। দুধ ফেলে বিছানা-ঘর ছেয়ে ফেলাও আরসবের মতোনই তার নিত্যদিনের কাজ।

সে আবার দুধছাড়া প্রায় কিচ্ছু মুখে দেয়না বলাই যায়। ফ্রুটস এন্ড জুস একটু খায়। মহা এংশাস আছি তাকে নিয়ে। বাইরে টাটা যেতে তার খুবই লোভ। বাবা বসা থেকে দাঁড়ালেই দৌড়ে চলে যাবে, সারাক্ষণ সেই মনোযোগ তার থাকেই যাতে ব্যস্ত থাকুক না কেন।

এখন হয়েছে কি, গতকাল দেখি তিনি কিচেন ডাস্টবিনে এক্টিভলি খেলাধুলা করছেন, এতো কথা বলার কারণ আসলে এইটা বলা। আমার মতো ওসিডি ওয়ালা মানুষের জন্য এইটা কী পরিমাণ ভয়ঙ্কর শকিং একটা দৃশ্য, এইটা সেরকম মানুষ ছাড়া কেউ বুঝবেনা। মনে হয়েছে কেউ বিষ এনে দিক, ঢক করে খেয়ে ফেলি। আমি চিৎকার দিলাম। আমার বড়মেয়ে আমাকে প্যানিক এটাক থেকে বাঁচানোর আশায় দৌড়ে গিয়ে দুষ্টুটাকে কালেক্ট করে নিয়ে আসলো, তাদের বাবা তড়িৎ গতিতে গিয়ে তাকে ক্লিন করে নিয়ে আসলো আপাদমস্তক। এই হইলো গতকালের ভয়ানক গল্প।

এই টুকুন বুড়াবাচ্চার অবস্থা বুঝতে পেরেছেন? আমার বড়ছেলে এর পুরাই উল্টা, তবে কোনভাবে একবার রাগলে শেষ। যাই হোক। দোয়া রাখবেন। দুষ্টু হলেও বড় মায়াবী, দয়াবান ছেলে আমার মাশাআল্লাহ্।

 

 

লেখিকাঃ সাবরিনা আরজুমান্দ একজন চিকিৎসক। প্রবাসিনী। পড়তে ও লিখতে ভালোবাসেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অসীম আকর্ষণ। ব্যস্তময় চিকিৎসা পেশার মধ্যেও লেখালেখি করেন। তিনি লিখেন নিজের আনন্দ ভুবন সৃষ্টির জন্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লেখা বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। নিজের ছোট ছেলেকে নিয়ে এই লেখাটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে অনুমতি স্বাপেক্ষে সংগৃহিত।

কিউএনবি/বিপুল/১০.০৯.২০২২/ রাত ৯.৪৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit