ডেস্ক নিউজ : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ২৪টি চা বাগানের প্রায় ২৫ হাজার চা শ্রমিক বৃহস্পতিবারও কাজে ফেরেননি। বিক্ষোভ মিছিল আর মানববন্ধন করেছেন নিজ নিজ বাগানে। যদিও সাধারণ শ্রমিকদের অনেকেই এখন পেটের দায়ে কাজে ফিরতে আগ্রহী। কারণ তাদের হাতে এখন টাকা নেই, ২ সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের কারণে শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। তারা বলছেন- ‘হামদের মা শেখ হাসিনা একটি কথা বলে দিলেই হামরা কাজে ফিরবেক’।
চান্দপুর বাগানের ধনেশ্বরী তন্তবায় বলেন, ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন করছি, আজ হাপ্তার তলবে (সাপ্তাহিক তলব বার) দিনে ২ দিনের মাত্র ২৪০ টাকা পেয়েছি, এ টাকা দিয়ে চাল ডাল কিনবো, না লবণ মরিচ কিনবো, না বাচ্চাদের স্কুলের খরচ দিব, ভাবতেই পাচ্ছি না, আর কিস্তিওয়ালার জ্বালা তো আছেই। আমু চা বাগানের সবিতা মুণ্ডা বলেন, হামরা (আমরা) আর কত আন্দোলন করবো, হামদের মা (আমাদের মা) শেখ হাসিনা হামদের একটা কথা বলে দিলেই তো হামরা কাজে ফিরবেক (ফিরে যাব)।
চা বাগানের বাইরে ধান কাটা এবং ধান রোপণের কাজ করছেন এমন কয়েকজন শ্রমিক জানান, আমাদের বাগানে আন্দোলন চলছে, তাই বস্তিবাড়ি কাজ করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনোরকম খেয়ে পড়ে চলছি। তারা জানালেন, আমরা তো কাজে ফিরতে চাই, কিন্তু আমাদের ৩০০ টাকার আন্দোলনে নামিয়ে নেতারা পালিয়েছে। এখন ৩০০ টাকা না হলে আমরা কাজে যাব না।
এর আগে বুধবার উপজেলা হলরুমে ২৪টি বাগানের পঞ্চায়েতদের নিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা বৈঠক করেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজে যোগদানের আহবান জানালেও তারা প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের কথা একটাই ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মা বলি। আমাদের মা যদি ভিডিও বার্তা বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজের মুখে আমাদের কাজে ফিরে যেতে বলেন, তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাব।’
চান্দপুর বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন সাঁওতাল বলেন, আমরা বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ডাকে আন্দোলনে নেমেছিলাম। এখন যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গে নেই, তাই আমরা এখন নিজেরাই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ৩০০ টাকা মজুরির ঘোষণা অথবা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা না হলে আমরা কাজে ফিরব না।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা এবং ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। মজুরি বাড়ানোর জন্য বাগান মালিক, মজুরি বোর্ড, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে ঢাকা ও শ্রীমঙ্গলে কয়েক দফা বৈঠকে দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
কিউএনবি/আয়শা/২৫ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৪৪