শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন

অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিলেন ডিসি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২
  • ১১৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : নিহত জাহাঙ্গীর দম্পতি তিন সন্তানের জনক ছিলেন। পরিবারে অভাব-অনটন থাকলেও তার সন্তানরা ছিল চোখের মণি। জাহাঙ্গীর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা, মা, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুব সুখেই জীবন অতিবাহিত করছিলেন। তিনিই ছিলেন পরিবারের  একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি।

জাহাঙ্গীর দম্পতির খুব ইচ্ছা ছিল আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে তার ছেলে না মেয়ে হবে। কিন্তু তা আর জানা হলো না। জানার আগেই একটি ঘাতক ট্রাক তাদের প্রাণ কেড়ে নিল। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোর্ট ভবন এলাকায় ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিন জন নিহত ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট ফেটে নবজাতকের জন্ম হয়।

কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে। পরিবারের তিন সদস্য মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশুটি। মা-বাবা, বোনহারা নবজাতক শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় প্রথমে ময়মনসিংহের সিবিএমসিবি হাসপাতালে ভর্তি  করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ময়মনসিংহের লাবীব প্রাইভেট হাসপাতালে সিবিএমসিবি শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মো. কামরুজ্জামান ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের ডা. সোহেল রানা সোহানের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।

ডাক্তার জানিয়েছেন নবজাতক শিশুটি আঘাতপ্রাপ্ত। তার ডান হাত প্লাস্টার করা হয়েছে। এখন শিশুটি সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত। এদিকে নিহত জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এলাকায় কান্নার রোল, আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে কান্নার শব্দে। নিহতের পরিবারে রয়েছে আরও দুটি সন্তান জান্নাত ১১ ও ছেলে এবাদত তার বয়স ৮ বছর। বাবা-মা হারা দুটি ছোট্ট শিশুর কান্না কোনোভাবেই থামছে না।

নিহত জাহাঙ্গীর পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। তিনি বাড়ির পাশে আকিজ পার্টিক্যাল বোর্ড কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। তার আয় দিয়েই চলতো সংসার।

এদিকে প্রিন্ট ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নবজাতকের খবর ভাইরাল হলে শিশুটির সম্পূর্ণ ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক এনামূল হক। এছাড়াও নবজাতকের দায়িত্ব নিতে আসছেন অনেক বৃত্তবান মানুষ। অনেকেই আসছেন দত্তক নিতেও। নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আমার পরিবারে দুটি ছেলে ছিল। ছোট ছেলেও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। জাহাঙ্গীর লেবারের কাজ করে সংসার চালাত।

তিনি কান্নাঝরা কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ আমার একমাত্র ছেলেকেউ কেড়ে নিল। এখন আমার নাতিনদের নিয়ে কী করব। আল্লাহ আমার ছেলে-বউ-নাতিকে কেড়ে নিলেও আরেক নাতিকে দিয়েছেন। নবজাতক কন্যাশিশুটি হাসপাতালে সুস্থ আছে। নিহত জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই শিপন বলেন, জাহাঙ্গীর ও রত্না দম্পতির তিন সন্তান। বাড়িতে ছিল তাদের বড় মেয়ে জান্নাত (১১) ও ছেলে এবাদত (৮)। এদের বাবা-মা দুজনই চলে গেলেন তাদের দেখার কেউ রইল না।

তিনি কান্নাঝরা কণ্ঠে বলেন, আরেক মেয়ে পৃথিবীতে আসলো বাবা-মার মুখও দেখতে পেল না। বাড়িতে তাদের দুই সন্তানের কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। জাহাঙ্গীরের ইচ্ছে ছিল তার বড় মেয়ে জান্নাতকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার। ময়মনসিংহ সমাজসেবা অফিসের প্রমোশন অফিসার আছাদুজ্জামান বলেন, আমরা সমাজসেবা অফিস থেকে নবজাতক কন্যাশিশুটির সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছি। নবজাতক এখন অনেক ভালো আছে। শিশুটিকে দত্তক নিতে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। শিশুটির দাদা, চাচা, মামা আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লাবীব হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, নবজাতক শিশুটির ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল তা প্লাস্টার করা হয়েছে। আমার কাছে নবজাতক শিশুর সাহায্যে অনেকেই এগিয়ে আসার জন্য ফোন দিচ্ছেন। নবজাতক শিশুটি ভালো আছে।

সিবিএমসিবি হাসপাতালে শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, নবজাতক শিশুটি আমার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। শিশুটির ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল তা প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির খাবার হিসেবে হাসপাতালে অন্য নবজাতক শিশুর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. এনামূল হক বলেন, শুনেছি শিশুটির কেউ নেই। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে শিশুটির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেব। শিশুটির বাড়ির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাঠিয়েছি।

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুর ২টায় উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রাম থেকে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ছয় বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য ত্রিশাল পৌর এলাকায় আসেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পারাপারের সময় ময়মনসিংহগামী দ্রুতগামী মালবাহী ট্রাক তাদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়। অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগমের পেটে থাকা নবজাতক শিশু চাপ খেয়ে পেট ফেটে রাস্তায় প্রসব হয়।

নবজাতক মেয়ে বাচ্চাটিকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে নবজাতক বাচ্চাটিকে  ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত তিনজনের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন ত্রিশাল থানা পুলিশ।

শনিবার রাত ১০টায় নিহতের লাশ বাড়িতে পৌঁছলে কান্নায় পুরো এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে বাড়ির উঠানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৭ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:২৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit