স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : যশোরের মনিরামপুরে শ্যামকুড় ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তর করা নিয়ে বর্তমান ও সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরোধ আবারও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে সোববার রাতভর মুজগন্নি গ্রামে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ তুমুল সংঘর্ষ হয়।এতে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনসহ অন্তত: ১৫ জন আহত হয়। ভাংচুর করা হয়েছে ফকিররাস্তা মোড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলিয় কার্যালয়টি। এছাড়াও ভাংচুর করা হয় দালিয় কার্যালয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর বাধানোর ছবি। প্রতিবাদে বর্তমান চেয়ারম্যান গ্রুপের কর্র্মী সমর্থকরা যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী অবরোধ করে রাখে।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। সংঘর্ষের ঘটনায় বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। রাতভর পুলিশি অভিযানে সাবেক চেয়ারম্যান গ্রুপের ছয় নেতাকর্মী আটক হয়েছে। আর এ ঘটনায় এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানাযায়, গতবছর ২৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে শ্যামকুড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি ও আলমগীর হোসেনের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। দলিয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকার প্রার্থী হন আলমগীর হোসেন।বিদ্রোহী প্রার্থী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। ফলে দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় দেখা দেয় ধারাবাহিক সংঘর্ষ।
এক পর্যায়ে মাঠে টিকতে না পেরে আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জামান প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। পরবর্তিতে নৌকার প্রার্থী আলমগীর হোসেন বিনাপ্রতিদ্বন্দীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।তবে নির্বাচনের পর থেকে শ্যামকুড় ইউনিয়নে দুই পক্ষের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সহ সংঘর্ষ হয়। শ্যামকুড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি জানান, সোমবার দুপুরে বাঙালীপুর গ্রামে তার কর্মী হাবিবুর রহমানকে মারপিট করেন বর্তমান চেয়ারম্যানের চাচা আইয়ুব হোসেন। অভিযোগ রয়েছে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে সন্ধ্যার পর বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে মুজগুন্নি গ্রামের হায়দার আলীকে মারপিট করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকরামুল কবির জানান, সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন নেতাকর্মীদের নিয়ে মুজগুন্নি গ্রামের মোড়ে যান স্থানীয় কর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ও তার বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক। এ সময় বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা নিয়ে দুই গ্রুপের কয়েক কর্মীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সহ সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আহত হয় বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান, অজিত ঘোষ, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য ছবুরোননেছা, মামুন হোসেনসহ অন্তত: ১২ জন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, অজিত ঘোষসহ অন্যান্য আহতদেরকে উদ্ধারের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের বাম হাত ও পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তাকে ওই রাতেই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে রাত নয়টার দিকে ফকির রাস্তা মোড়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দলিয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানের কয়েকজন কর্মীকে মারপিট করা হয়। ভাংচুর করা হয় দলিয় কার্যালয় ছাড়াও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর বাধানো ছবি। এ দিকে হামলার প্রতিবাদে আলমগীর হোসেনের কর্মী সমর্থকরা রাত নয়টার দিকে সুন্দলপুর বাজারে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ গিয়ে রাত এগারোটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। পরে রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাবেক চেয়ারম্যান গ্রুপের ছয় নেতাকর্মীকে আটক করে। এরা হলো জামলা গ্রামের হোসাইন আহম্মদ, শ্যামকুড় গ্রামের ফজলুর রহমান, মুজগুন্নি গ্রামের বাবুল হোসেন, রায়হান হোসেন, রেজাউল করিম ও হাফিজুর রহমান।
এ দিকে অভিযোগ রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যানের কর্মী সমর্থকরা হামলার জের হিসেবে মঙ্গলবার সকালের দিকে মুজগন্নি গ্রামে সাবেক চেয়ারম্যানের কর্মী আবদুর রহিমের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। পরে তাকে উদ্ধারের পর কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, বিগত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ও তার সন্ত্রাসীরা এলাকায় তার কর্মী সমর্থকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালানো সহ মারপিট করছে। এছাড়াও অনেক নেতাকর্মীর দোকানপাট, ঘর, জমি দখল করে নিচ্ছে। অপরদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ও তার লোকজন পরিকল্পীতভাবে তার কর্মী সমর্থকদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর-ই-আলম সিদ্দীকি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ছয় জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কিউএনবি/আয়শা/১২ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৩৯