শিমুল দেব, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভায় সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত দুর্ঘন্ধযুক্ত নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠার এক দিন পেরিয়ে গেলেও চালের কোন সুরাহা হয়নি। সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে খাদ্য বিভাগ ও চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পৌরসভার দাবী, নিম্নমানের দূর্ঘন্ধযুক্ত খাবার অযোগ্য চাল দুস্থ্যদের মাঝে বিতরন করলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। উভয় পক্ষের বিপরীতমূখী অবস্থানের কারনে ঈদের আগে ভিজিএফের চাল বিতরনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ৮১ দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে ভিজিএফ এর ১০ কেজি করে চাল বিতরনের বরাদ্দ পাওয়া যায়। সে হিসাবে ৩০ টন ৮শ ১০ কেজি (৩০ হাজার ৮শ ১০ কেজি ) চাল সোমবার (৪ জুলাই) বিকালে উলিপুর খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ করা হয়। ওই চাল টলি যোগে পৌরসভায় পৌছিলে কিছু চালের বস্তা গুদামে তোলা হয়। এরমধ্যে দূর্গন্ধযুক্ত নিম্নমানের খাবার অযোগ্য চালের বিষয়টি চোখে পরে। তখন পৌর কর্মচারীরা চালের বস্তা বাছাই করতে গিয়ে দেখেন বিভিন্ন ধরনের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। কোন বস্তার চাল ছাতা ধরা, কোন বস্তায় দূর্ঘন্ধযুক্ত নিম্নমানের আবার কোন বস্তায় খুদগুড়া মেশানো চাল। এছাড়া চালের বস্তা গুলোর মুখের সেলাই দুই ধরনের ছিল। হাতের ও মেশিনের সেলাই।
এ অবস্থা দেখে পৌর মেয়র মামুন সরকার মিঠু খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। পরে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান পৌরসভায় গিয়ে খারাপ চাল পরিবর্তন করে দিতে চান। কিন্তু মেয়র খারাপ চাল আটকে দিয়ে জানতে চান এই নিম্নমানের চাল কোথা থেকে এলো। এদিকে চালের ঘটনার কোন সমাধান না হওয়ায় ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চালের বস্তা গুলো পৌর চত্বরে পরে রয়েছে। এ ঘটনায় মেয়রের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সোমবার রাতে একটি তদন্ত টিম ও মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অপর একটি তদন্ত টিম পৌরসভায় আসেন।
এদিকে সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে খাদ্য বিভাগ ও চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবী করেছেন মেয়র। পৌরসভার দাবী, নি¤œমানের দূর্ঘন্ধযুক্ত খাবার অযোগ্য চাল দুস্থ্যদের মাঝে বিতরন করলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এতে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ঈদের আগে ভিজিএফের চাল বিতরন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় ভিজিএফের উপকারভোগী দুস্থরা পরেছেন বিপাকে। পৌর মেয়র মামুন সরকার মিঠু বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে নিম্নমানের দূর্ঘন্ধযুক্ত চাল সরবরাহ করা হয়েছে। যা খাওয়ার যোগ্য নয়। এ বিষয়ে অভিযোগ করলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে তদন্ত টিম এসে চাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান।
তারা সরেজমিনে দূর্ঘন্ধযুক্ত নিম্নমানের চাল পরিলক্ষন করে চলে যান। কোন সমাধান না দেয়ায় ঈদের আগে ভিজিএফের চাল দুস্থদের মাঝে বিতরন করতে ঝামেলা হচ্ছে। দুস্থরা ঈদের আগে চাল না পেলে এর দায়ভার উপজেলা খাদ্য বিভাগকে নিতে হবে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও তদন্ত টিমের আহবায়ক নাজমুল হক মুঠোফোনে জানান, আমরা তদন্ত করেছি। যেভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। চাল গুলো ওতো খারাপ নয়। গুদামে ৭-৮ মাস পড়ে থাকলে চালের রং পরিবর্তন হয়। এছাড়া দুইবার ছাটাই এর চালে একটু গন্ধ থাকে। আমাদের তদন্ত রিপোর্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দেয়া হবে তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন। তিনি আরও বলেন, যতটুকু আমি জানি মঙ্গলবার উলিপুর খাদ্য বিভাগ মেয়রের সাথে যোগাযোগ করে চাল গুলো পরিবর্তন করে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু মেয়র এ বিষয়ে লিখিত আদেশ চেয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দুইটি তদন্ত টিম এসেছিল। আমি যতটুকু শুনেছি, সোমবার রাতের তদন্তটিম চাল খারাপের বিষয়টি মেয়রের কাছে স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবারের তদন্ত টিম কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাল বিতরনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনে খারাপ চাল দায়িত্বশীদের হেফাজতে রেখে ভিজিএফের চাল বিতরনে ব্যবস্থা করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/০৫ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৫৯