এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের পাতিবিল গ্রাম নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ঠান্ডু বিশ্বাস (৫২) হত্যার ঘটনায় চৌগাছা থানায় মামলা হয়েছে। ২২ ফেব্রয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের ছেলে টিংকু পারভেজ গ্রামের ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করেছেন। চৌগাছা থানায় মামলা নং ৩২। এ ঘটনায় ইউপি নির্বাচনে ঠান্ডু বিশ্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রুহুল আমীন রুলু (৬০), তার ছেলে টিটো (৪০), কবির হোসেন (৩০), রওশন আলী (৪৫) এবং তোতাকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বাদী মামলার এজহারে বলেন- দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকার রাজনৈতিক আধিপত্য, প্রভাব বিস্তার ও এলাকার বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আসামিদের সাথে আমার পিতাসহ অন্য ভিকটিমদের মতবিরোধ চলে আসছিলা। এ জেরে তারা আমার পিতা ও ভিকটিমদের হুমিক দিয়ে আসছিলো। সোমবার সন্ধ্যায় পাতিবিলা বাজারে নিছারের চায়ের দোকানের সামনে পাকার রাস্তারউপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় আসামি টিটো তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে আমার বাবার পেটের ডান পাশে কোপ মারলে তিনি গুরুতর আহত হন এবং আমার পিতার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। অন্য এক আসামি ছুরি দিয়ে পেটের বাম পাশে আঘাত করে এবং আরেকজন বেলচা (বালি উঠানো যন্ত্র) দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে।
আসামিরা আমার পিতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করতে থাকে। তখন পিতার পরিচিত আনিছুর রহমান বাবু, মোমিনুর, সিদ্দিক, আব্দুল হামিদ ও অসিম ঘোষসহ অন্যরা এগিয়ে আসলে রওশনহাতুড়ি দিয়ে আমার চাচা আব্দুল হামিদের মাথায় আঘাত করে। রুহুল আমিন ধারালো দা দিয়ে মমিন বিশ্বাসের মাথায় কোপ মারে। অন্যরা আঘাত করে মকবুল হোসেন, অসীম কুমার ও সিদ্দিকুর রহমানকে আহত করে। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে গেলে আমার পিতাসহ অন্যদের উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা মডেল সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা গুরুতরঅবস্থায় আমার পিতা ঠান্ডু বিশ্বাস, মোমিনুর ও আব্দুল হামিদকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করেন। যশোর হাসপাতালে নিলে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে আমার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মামলায় পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার নাম উল্লেখ করে বলা হয় এই দুই নেতার ছত্রছায়ায় এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়।
নিহতের স্ত্রী লিপি খাতুনসহ স্থানীয়রা বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আমার স্বামীকে প্রতিহত করতে না পেরে গ্রামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে আহতদের মধ্যে মোমিনুর ও আব্দুল হামিদ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং অসিম কুমার ঘোষ ও মকবুল হোসেনকে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এছাড়া সিদ্দিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
অন্যদিকে হামলাকারী পক্ষের টিটো (৩৫) চৌগাছা উপজেলা মডেল সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধার পর চিকিৎসা না নিয়েই হাসপতাল থেকে পালিয়ে যায়। তাকে সোমবার রাত ১টার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিত্যানন্দি গ্রামের জনৈক মনিরুল ইসলামের বাড়ি থেকে আটক করে যশোর গোয়েন্দা পুলিশ। আটকের পরই তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন। স্থানীয়রা জানান- নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, সরকারি মর্জাদ বাওড়ের মাছ ধরা, বালু ও মাটি ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং দোকান ভাড়া দেয়া নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা বিষয় নিয়ে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী ঠান্ডু বিশ্বাস ও পরাজিত রুহুল আমীন রুলু পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ঠান্ডু বিশ্বাসের পেটের ডান দিকের ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। আহত হয় উভয় পক্ষের আরো ছয় ব্যক্তি। ভাঙচুর করা হয় দুটি পালসার ও একটি সিটি-১০০ মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় সোমবার রাত ও মঙ্গলবার পুলিশ পাতিবিলা গ্রাম থেকে চারজনকে এবং গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি সোমবার রাতে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া টিটোকে আটক করেন। চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে টিটো পুলিশ প্রহরায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের সবাইকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আটককৃতদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৩৯