এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন স্থানে ২৫/৩০টি ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু তুলে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর পক্ষে একজন ইউপি সদস্য এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মোবাইলে অভিযুক্তদের কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু তুলতে নিষেধ করেছেন। তার পরেও এসব অসাধু ব্যক্তিরা কপোতাক্ষ নদের চৌগাছা অংশের অন্তত পাঁচটি স্থানে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছেন । স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এক স্থানে বালু তুলতে বাঁধা দিলে সেখান থেকে মেশিন সরিয়ে অন্য স্থানে নিয়ে আবারো বালু উত্তোলন করছেন তারা।
বালু খেকোরা সরকারি দলের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কিছুই বলতে পারেন না। এলাকার কৃষকদের আশঙ্কা বেপরোয়া ভাবে বালু তুলায় আগামী বর্ষা মৌসুমে অথবা যেকোনো সময় বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি ধ্বসে নদের গর্ভে বিলিন হতে পারে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কপোতাক্ষ নদ চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুরে ভৈরব নদথেকে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি হয়েছে। নদটি উপজেলার নারায়ণপুর, পাতিবিলা, চৌগাছা পৌরসভা, স্বরূপদাহ, চৌগাছা সদর, ধুলিয়ানী ও পাশাপোল ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে। যা যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও কেশবপুর উপজেলা হয়ে বয়ে গেছে। নদটি চৌগাছা উপজেলার বুকচিরে একেবেঁকে বয়ে চলেছে। নদের পশ্চিমে রয়েছে উপজেলার বৃহৎ তিন ইউনিয়ন নারায়ণপুর, স্বরূপদাহ এবং সুখপুকুরিয়া।
৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি স্থল হাকিমপুরের তাহেরপুরে গেলে দেখা যায়, বালু খেকোরা পানিগ্রাম রিসোর্টের দক্ষিণ পাশে ও পানিগ্রাম রিসোর্টের ভিতরে, তাহেরপুর শ্মশানঘাটের পাশে ১০/১২ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলে স্তুপ করে রেখেছেন। একটু পাশেই আরো কয়েকটি স্থানে মেশিন বসানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এসব বালু তুলে যে সব জমিতে রাখা হয়েছে তাদের জমির ভাড়ার নামে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। জমির মালিকরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, যারাবালু তুলছে তারা সবাই সরকারি দলের প্রভাবশারীদের কাছের লোক তাই আমাদের কিছুই বলার নেই।
স্থানীয়রা জানান, যারা বালু তুলছে তাদেরকে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য স্বাধীন কয়েকদিন আগে ওই স্থান থেকে বালু তুলতে নিষেধ করেন। একদিন বালু তোলা বন্ধ রেখে ফের তারা আবার বালু তোলা শুরু করেছেন। এছাড়াও নারায়নপুরের পেটভরা, চৌগাছা পৌরসভার শ্মশান ঘাট, চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা ও বেড়গবিন্দপুরসহ সাতটি স্থানে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা গ্রামের ইউপি সদস্য বায়েজিদ হোসেন গত ২ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মোবাইল ফোনে ওই ব্যক্তিদের বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
তবে সেখানে বন্ধ হলেও তাহেরপুর গ্রামের দুই তিন স্থানে প্রায় ১২টি মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে বালু খেকোরা। একই সাথে পেটভরা গ্রামে কয়েকটি মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি পৌরসভার শ্মশান ঘাট এলাকায় কপোতাক্ষ নদে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছিলো। সংবাদ পেয়ে আমি তাদের কঠোরভাবে নিষেধ করেছি। পরে সেখান থেকে বালু তোলা বন্ধ হয়েছে। এভাবে নদ থেকে বালু তোলা স¤পূর্ণ নিষেধ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এসব ব্যক্তিরা কিভাবে পার পেয়ে যান সেটা বুঝিনা।
এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, আমি করোনায় অসুস্থ থাকা অবস্থায় এমন একটি লিখিত অভিযোগ পাই। নদ থেকে বালু তোলা ব্লধ করতে চৌগাছা সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তাদের নিষেধ করা হয়। পরে অন্য স্থানে বালু তোলা শুরু করলে আমি মোবাইলে তাদের নিষেধ করি। তারা কথা দিয়েছিলেন আর বালু তুলবেন না। তিনি বলেন, চৌগাছায় স্বীকৃত কোনো বালু মহাল নেই। কোন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বালুর প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে বালু তোলা যাবে বলে বালুমহাল নীতিমালায় উল্লেখ আছে। তবে আমার জানা মতে চৌগাছার বালু উত্তোলনকারীদের কারো জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নেয়া নেই। এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:২১