শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

হাদিসের সনদ ইসলামের সত্যতার দলিল

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৩০ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ধর্মের ধর্মীয় রীতিনীতি ও বিধানগত বিষয়গুলো সাক্ষ্য ও প্রমাণ্য নির্ভরভাবে সংরক্ষিত। সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম বিষয় হলো সনদ। রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনাকারীদের যে সূত্র পরম্পরায় হাদিস আমাদের কাছে পৌঁছেছে তাকে সনদ বলে। শরিয়তের বিশ্লেষণধর্মী উৎস হাদিস সংরক্ষিত হয়েছে এই সনদের মাধ্যমেই। যে হাদিসের সনদ নেই তা অগ্রহণযোগ্য। তাই ইসলামে সনদের গুরুত্ব অপরিসীম। আহলে কিতাবরা সনদের বিষয়ে যথেষ্ট উদাসীন ছিল, ফলে তাদের কাছে তাদের নবীদের থেকে বিশুদ্ধ কোনো কিছুই সংরক্ষিত থাকেনি। এমনকি তাদের আসমানি কিতাবসমূহও বিকৃতির শিকার হয়েছে। সুতরাং সনদের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া এই উম্মতের দায়িত্ব ও অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রখ্যাত ফকিহ ও মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, ‘সনদ দ্বিনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যদি সনদ না থাকত, যার যা ইচ্ছা তা-ই বলত।’ (মুকাদ্দিমা সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা ১২)

ইমাম শাফেঈ (রহ.) বলেন, ‘যারা সনদবিহীন হাদিস অনুসন্ধান করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো রাতের আঁধারে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহকারীর মতো, যে অজ্ঞাতসারে এমন জ্বালানি কাঠের বোঝা বহন করে, যাতে রয়েছে অজগর সাপ।’ (আল ইসনাদু মিনাদ্দিন, পৃষ্ঠা : ৯৬)

সনদের গুরুত্ব তুলে ধরে কাজি আবু বকর ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে সনদের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন, যা আর অন্য কোনো উম্মত পায়নি। সুতরাং তোমরা ইহুদি ও নাসারাদের মতো সনদবিহীন হাদিস বর্ণনা থেকে বেঁচে থাকো। অন্যথায় তোমাদের থেকে আল্লাহর এই নিয়ামত উঠে যাবে। তোমাদের প্রতি অভিযোগের দরজা খুলে যাবে। তোমাদের মর্যাদা কমে যাবে। আর তোমরা এমন জাতির সঙ্গে মিলিত হবে ও তাদের অনুসরণ করবে যাদের ওপর আল্লাহর লানত ও গজব।’ (ফেহরেসুল ফাহারিস : ১/৮০)

তবে সনদের সব তথ্য গ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিমুক্ত রাখতে যুগে যুগে ইমামরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করেছেন। হাদিস শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য মূলনীতি ও মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সনদের সব তথ্য সংরক্ষিত করেছেন।

শায়খুল ইসলাম মুস্তফা সাবরি (রহ.)-এর নিচের বক্তব্যটির মাধ্যমে তাদের বিস্ময়কর পরিশ্রমের বিষয়টি  ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, ‘হাদিস শরিফের জন্য রেওয়ায়েত (বর্ণনা) পরীক্ষার সর্বোত্তম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। সূক্ষ্মতা ও সাফল্যের বিচারে পাশ্চাত্যের আধুনিকতম ইতিহাস পরীক্ষার পদ্ধতিও এর সঙ্গে তুলনীয় নয়। একটি দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সহিহ বুখারিতে পুনরোল্লেখ বাদ দিলে ২০৬২ মুসনাদ হাদিস আছে, যা ইমাম বুখারি বাছাই করেছেন তাঁর মুখস্থ এক লাখ হাদিস থেকে (এই সংখ্যাটা সনদভিত্তিক) এবং তাতে প্রায় দুই হাজার রাবি বা বর্ণনাকারী আছে। সহিহ বুখারি চার খণ্ডে প্রকাশিত; কিন্তু সনদগুলো বাদ দিলে তা হবে মাঝারি আকারের এক খণ্ডের একটি গ্রন্থ। প্রশ্ন এই যে পৃথিবীতে এমন কোনো ইতিহাসগ্রন্থ আছে কি, যার তথ্যগুলো দুই হাজার নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বিবরণ? আর তাঁদের সম্পর্কে গ্রন্থকার নিজেও যেমন অবগত তদ্রুপ বিশেষজ্ঞরাও তাদের সম্পর্কে অবগত। উপরন্তু এই গ্রন্থের প্রতিটি তথ্য, যা গড়ে এক লাইনের মতো, কে কার কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি কার কাছ থেকে, এভাবে রাসুল (সা.) পর্যন্ত পূর্ণ সনদ উল্লিখিত হয়েছে। সুতরাং গ্রন্থের প্রতিটি  তথ্যের সঙ্গে তার সাক্ষ্যদাতা বর্ণনাকারীদের পূর্ণ ধারা উল্লিখিত হয়েছে, যারা ওই তথ্যের পূর্ণ দায়িত্ব বহন করবেন।’ (মাওকিফুল আকলি ওয়াল ইলমি ওয়াল আলম  : ৪/৮৭)

শুধু তা-ই নয়, বর্নণাকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে সনদের সব বর্ণনাকারীর পরিচয় ও নির্ভরযোগ্যতা-অনির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করেছেন। এমনকি নবী(সা.)-এর জীবনের প্রতিটি তথ্য প্রামাণিক পন্থায় সংরক্ষণের জন্য মুহাদ্দিসরা প্রায় লক্ষাধিক রাবির (বর্ণনাকারী) জীবনী সংকলন করেছেন। তাদের সময়কাল, সততা-সত্যবাদিতা, স্মৃতিশক্তি ও ধীশক্তি, হাদিসশাস্ত্রের চর্চা ও অভিজ্ঞতা, বর্ণনার মান ও পরিমাণ, উস্তাদ ও ছাত্রদের তালিকা, আবাস ও প্রবাসের বিভিন্ন তথ্য, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন, তাঁর সমসাময়িক কিংবা পরবর্তী যুগের ইমামুল হাদিসদের তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য ইত্যাদি বিষয় সংকলিত হয়েছে। এই বিস্ময়কর শাস্ত্র ‘আসমাউর রিজাল’ নামে পরিচিত। এটা অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কঠিন কাজ। কিন্তু শত শত মুহাদ্দিস এ কাজে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ইসলামবিদ্বেষী গবেষকরা পর্যন্ত মুসলিম মনীষীদের এই অমর কীর্তিতে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। ডা. স্প্রেঙ্গার আল-ইসাবার লিখেন, “পৃথিবীতে অতীতের কোনো জাতি এমন ছিল না, আজও নেই, যারা মুসলমানদের মতো ‘আসমাউর রিজালে’র সুবিশাল শাস্ত্র প্রস্তুত করেছে। যার মাধ্যমে আজ পাঁচ লাখ মানুষের অবস্থা জানা যেতে পারে।” (খুতবাতে মাদরাস, পৃষ্ঠা ৪৫)

হাদিসশাস্ত্রে ‘আসমাউর রিজাল’ শাস্ত্রের মতো ‘ইলাল’ শাস্ত্রও এক বিস্ময়। আসমাউর রিজালশাস্ত্রে যেমন অসংখ্য রাবির জীবন ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, তদ্রুপ ইলালশাস্ত্রেও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে হাজারো সনদ ও বর্ণনার যাবতীয় বিষয়।

সার কথা হলো, হাদিসশাস্ত্র ইতিহাসের এক বিস্ময়ক কীর্তি। জগতের কোনো জাতিই তাদের ধর্মগুরু বা কর্মগুরুর জীবন এতটা সনদনির্ভর বা প্রামাণিকভাবে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়নি। শুধু ইসলামের ইমামদের বিস্ময়কর প্রচেষ্টা, ধারাবাহিক অধ্যবসায় ও নবী (সা.)-এর প্রতি অতুলনীয় প্রেম-ভালোবাসায় তা সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে যেকোনো সভা-সেমিনার, ওয়াজ মাহফিল ও লেখালেখিসহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে নবীজির হাদিস সনদসহ যাচাই-বাছাই করে বর্ণনা করার তাওফিক দান করুন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৭ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১০:১৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit