স্পোর্টস ডেস্ক : মার্সেলো চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সকল প্রকার ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্সেলো ভিয়েরা। ২০০৫ সালে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন মার্সেলো। তবে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা তিনি কাটিয়েছেন ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার পর। দীর্ঘ ১৬ বছর রিয়ালে কাটানোর পর গ্রিসের ক্লাব অলিম্পিয়াকসে যোগ দেন। এরপর নিজ দেশের ক্লাব ফ্লুমিনেসে পারি জমান। ক্লাব ফুটবলে শেষ ম্যাচটা তিনি খেলেছেন সেখানেই।
২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন এই লেফট ব্যাট। সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারও ছিলেন তিনি। জিতেছেন ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে নানান ট্রফি।
সার্জিও বুসকেটস
সেপ্টেম্বরে অবসরের ঘোষণা দেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সার্জিও বুসকেটস। ৩৭ বছর বয়সি এই ফুটবলে তার সেরা সময়টা কাটিয়েছেন বার্সেলোনাতে। ক্লাবের হয়ে জেতেন বহু ট্রফি। জাতীয় দলের হয়েও জিতেছেন ইউরো ও বিশ্বকাপ।বার্সেলোনার হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন বুসকেটস।
বার্সেলোনা ছেড়ে ২০২৩ সালে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েও জিতেছে ট্রফি। তবে সময়ের সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের একজন বুসকেটসকে সকলে মনে রাখবে তার বার্সেলোনার অধ্যায়ের জন্য।
জর্ডি আলবা
বুসকেটসের সঙ্গে একই সাথে অবসরের ঘোষণা দেন আরেক স্প্যানিশ ফুটবলার জর্ডি আলবা। স্প্যানিশ এই ডিফেন্ডারও বার্সেলোনায় তার সেরা সময়টা কাটিয়েছেন। তবে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল কর্নেলাতে। সেখান থেকে ভ্যালেন্সিয়া ঘুরে ২০১২ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি। সেখান কাটান ১১ বছর। জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে কোপা দেল রে, সুপার কাপ, লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগও।
শুধু তাই নয়, জাতীয় দলের হয়েও তার অর্জন কম নয়। স্পেনের হয়ে ৯৩ ম্যাচ খেলা এই লেফট ব্যাট জিতেছেন স্পেনের হয়ে ইউরো। ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন ২০২৩ সালে। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে তিনি জেতেন এমএলএস কাপ।
ম্যাটস হামেলস
চলতি বছরের শুরুতে অবসরের ঘোষণা দেন জার্মানির হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতা ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির এই সেন্টার ব্যাক ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির একজন অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন। সেই সময়টাতেই ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিলেন তিনি।বায়ার্নের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন হামেলস।
ক্লাব ফুটবলে বায়ার্ন মিউনিখে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করলেও, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে সেরা সময়টা পার করেছেন। ডর্টমুন্ডে তিনি সাড়ে তিনশ’র মতো ম্যাচ খেলেছেন। ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন লিগ শিরোপাও। ইতালিয়ান ক্লাব রোমাতে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলেছেন হামেলস।
স্যামুয়েল উমতিতি
ইনজুরি তার ক্যারিয়ারকে শেষ করে দেয়। ২০১৮ সালে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা এই ডিফেন্ডার মাত্র ৩১ বছর বয়সেই অবসরের ঘোষণা দেন। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উমতিতির গোলই ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল।
তবে ইনজুরি তাকে বেশিদিন মাঠে থাকতে দিল না। ফরাসি ক্লাব লিওঁ থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার পর হাঁটুর ইনজুরি তাকে এতো ভুগিয়েছে, শেষ পর্যন্ত ক্লাবহীন ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে আরেক ফরাসি ক্লাব লিলে যোগ দেন উমতিতি। তবে সেখানেও ইনজুরির কবলে পড়েন এই ফরাসি ডিফেন্ডার। অবশেষে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
পেপে রেইনা
তবে ফুটবলে সবার ক্যারিয়ার যে সংক্ষিপ্ত হবে তেমনটা নয়। স্প্যানিশ গোলকিপার পেপে রেইনা এক ভিন্ন উদাহরণ। ১৯৯৯ সাল থেকে সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করা এই গোলকিপার অবশেষে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন এই বছর। ৪৩ বছর বয়সি এই গোলকিপার স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। খেলেছেন ১০টি ক্লাবে। তবে সেরা সময় ছিল তার ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল লিভারপুলে।স্পেনের হয়ে ২০১০ সালে বিশ্বকাপ জিতেছেন রেইনা।
এই সময়টাতে তিনি জিতেছেন লিগ কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ২০২৪ সালে ইতালিয়ান ক্লাব কোমোতে যোগ দেন খেলোয়াড়ের পাশাপাশি গোলকিপার কোচ হিসেবে। তবে এক মৌসুম পরই অবসরে যান তিনি। তবে আফসোসের বিষয় হচ্ছে, তার সময় স্পেনে ইকার ক্যাসিয়াসের মতো গোলকিপার থাকায় জাতীয় দলে বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি রেইনার। ২৬ বছরের ক্যারিয়ারে স্পেনের জার্সি গায়ে মাত্র ৩৬ ম্যাচ খেলেছেন।
রাফিনহা আলকান্তারা
চলতি মাসেই অবসরের ঘোষণা দেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার রাফিনহা আলকান্তারা। এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারও দীর্ঘ হয়নি। তার মূল কারণ ইনজুরি। অ্যান্টিরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট এবং মেনিস্কাসের আঘাতের কারণে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনি প্রায় মাঠের বাইরে চলে যান। মোট ৫০০ দিন ধরে রাফিনহা মাঠের বাইরে ছিলেন।
রাফিনহা বিখ্যাত লা মাসিয়া একাডেমির মধ্য দিয়ে উঠে আসেন এবং একসময় বার্সেলোনার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল এবং প্রযুক্তিগতভাবে প্রতিভাবান মিডফিল্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচিত হতেন। তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে উঠে আসে ২০১৪-১৫ মৌসুমে। যখন কোচ লুইস এনরিকের অধীনে বার্সেলোনা লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ঐতিহাসিক ট্রেবল জিতেছিল। ৩২ বছর বয়সেই থেমে গেল তার ফুটবলের পথযাত্রা।
অস্কার দস সান্তোস
এক সময়ের উদীয়মান ফুটবলার অস্কার চলতি বছর অবসরের ঘোষণা দেন। তার অবসরে যাওয়ার মূল কারণ ইনজুরি নয়। মূলত, হৃদরোগের কারণে পেশাদার ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক চেলসি তারকা। এখনও তার অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও, অস্কারের ক্লাব সাও পাওলোর সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গিয়েছে।
ডিসেম্বর প্রায় আট বছর চীনে কাটানোর পর তিন বছরের চুক্তিতে সাও পাওলোতে যোগ দিয়েছিলেন অস্কার। চীনে তিনি পরিসংখ্যান ও শিরোপা—দুই দিক থেকেই লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। এর আগে চেলসির হয়ে তিনি ২০৩টি ম্যাচ খেলে ৩৮টি গোল করেন এবং দুটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি ইউরোপা লিগ ও একটি লিগ কাপ জয় করেন। ২০১৭ সালে রেকর্ড ট্রান্সফারে তিনি সাংহাইতে পাড়ি জমান।
এক সময় বেলজিয়ামকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইয়ান ভার্টংহেন।
এই সকল ফুটবলার ছাড়াও আরও বেশকিছু ফুটবলার চলতি বছর অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক টটেনহ্যামের ডিফেন্ডার টবি অ্যাল্ডারওয়েইরেল্ড এবং ইয়ান ভার্টংহেন, সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা হোসে ক্যালেজন, ডেনমার্কের ডিফেন্ডার সাইমন কেজার।