মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
খালেদা জিয়া : একজন মহীয়সীর মহাপ্রয়াণ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্বামীর ‘বীর প্রতীক’ খেতাব বাতিল নওগাঁ ছয়টি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ মোট ৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল  নিস্তব্ধ এভারকেয়ার, অশ্রুসিক্ত চোখে ‘আপসহীন’ নেত্রীর জন্য প্রার্থনা আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল ইয়েমেনের রাঙামাটিতে ৬৫০ লিটার চোলাই মদভর্তি গাড়িসহ আটক-১ ঋণের আশ্বাসে ধর্ষণ,ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল! রাঙামাটিতে ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা নেত্রকোণায় নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে অ্যাডভোকেসি ডায়ালগ সভা অনুষ্ঠিত চৌগাছায় রাগীব আহসান নিহাল আইডিয়াল স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ নরসিংদীতে ছাত্রদলকর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

নিস্তব্ধ এভারকেয়ার, অশ্রুসিক্ত চোখে ‘আপসহীন’ নেত্রীর জন্য প্রার্থনা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩২ Time View

ডেস্ক নিউজ : বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার চিরবিদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলের ঊর্ধ্বতন নেতাসহ হাজার হাজার শোকাহত নেতাকর্মী। প্রিয় নেত্রীকে হারানোর বেদনায় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক নিস্তব্ধতা ও শূন্যতা বিরাজ করছে।

এদিকে আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নেওয়া হবে। এর আগে হাসপাতালের সামনে তাকে দেখার সুযোগ নেই— এমন খবর জানার পরও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে প্রবীণ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অশ্রুসিক্ত চোখে সবাই তাদের প্রিয় ‘আপসহীন’ নেত্রীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করছেন।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি সমর্থক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী শোকাহত কণ্ঠে বলেন, খালেদা জিয়া আমাদের আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মা। রাজনীতির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। বাংলাদেশের জন্য তাকে আরও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন ছিল।

বাড্ডার বেড়াইদের মোড়লপাড়া থেকে আসা মোহাম্মদ নাসির বলেন, সকালে নেত্রীর ইন্তেকালের খবর শুনেই এখানে ছুটে এসেছি। মনটা খুব ভারাক্রান্ত। দীর্ঘ সময় নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, কারাবরণ করেছেন। অথচ যখন তিনি সবকিছু থেকে মুক্ত হলেন, তখনই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তার জন্য মন থেকে দোয়া করি। গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত জটিল এবং তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছিলে।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন (বিএনপির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে তার জন্মস্থান জলপাইগুড়িতে)। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। তাদের আদি বাড়ি ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। তবে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া এলাকায়।

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৪৩ বছর

শৈশবে তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর দলের সংকটময় মুহূর্তে তিনি রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

আশির দশকে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। আপসহীন সংগ্রামের কারণে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এই দীর্ঘ আন্দোলনে তিনি সাত দলীয় জোট গঠন করেন এবং স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দৃঢ় ঘোষণা দেন। এই দীর্ঘ লড়াইয়ে তাকে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার আটক ও গৃহবন্দী করা হয়েছিল।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার সময়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি শিক্ষা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন; যার মধ্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা এবং উপবৃত্তি কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া, তিনি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করেন।

১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হলেও তিনি ১১৬টি আসন নিয়ে সংসদে বৃহত্তম বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি চারদলীয় জোট গঠন করেন এবং ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ২৯ নম্বরে স্থান দেয়।

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে কোনো আসনেই পরাজিত না হওয়ার অনন্য রেকর্ডের অধিকারী। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে যে কয়টি আসনে দাঁড়িয়েছেন, তার সবকটিতেই জয়লাভ করেছেন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট সিনেট গণতন্ত্রের প্রতি তার অবদানের জন্য তাকে ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ উপাধিতে ভূষিত করে।

২০১৮ সালে একটি বিতর্কিত মামলার রায়ে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে একে একে সব মামলায় খালাস পান বিএনপি চেয়ারপারসন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩০ ডিসেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৫:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit