রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

যেভাবে ২০০ শিশুর জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন এক শুক্রাণুদাতা, ক্যান্সারের শঙ্কা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৫০ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইউরোপ জুড়ে প্রায় ২০০ শিশুর জন্ম দিয়েছেন এক শুক্রাণু দাতা। যিনি অজান্তেই নিজের মধ্যে ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী জিনগত মিউটেশন বহন করছিলেন। ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের প্রধান তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

এই মিউটেশনটি শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেয়। যেসব শিশু এই জিনটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ক্যান্সারের হাত থেকে রেহাই পাবে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে কিছু শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। যদিও এই দাতার শুক্রাণু যুক্তরাজ্যের ক্লিনিকগুলিতে বিক্রি করা হয়নি। তবুও বিবিসি নিশ্চিত করেছে যে ডেনমার্কে চিকিৎসা নেওয়ার সময় খুব অল্প সংখ্যক ব্রিটিশ পরিবার এই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করেছিলেন এবং তাদের ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ডেনমার্কের ইউরোপীয় স্পার্ম ব্যাংক এই শুক্রাণু বিক্রি করেছিল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। তারা স্বীকার করেছে, কিছু দেশে এই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে অত্যধিক সংখ্যক শিশুর জন্ম হয়েছে।

তদন্ত অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে প্রায় ১৭ বছর ধরে এই বেনামি দাতার শুক্রাণু ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও দাতা নিজে সুস্থ ছিলেন এবং প্রাথমিক স্ক্রিনিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তবুও তার ডিএনএতে মিউটেশনের ফলে টিপি৫৩ জিনের ক্ষতি হয়েছিল। যা শরীরের কোষকে ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দাতার শুক্রাণুর প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত এই বিপজ্জনক মিউটেশন বহন করে।

এই মিউটেশন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শিশুদের Li Fraumeni Syndrome হতে পারে। যার কারণে তাদের জীবদ্দশায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষ করে শৈশবের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, মস্তিষ্কের টিউমার এবং লিউকেমিয়ার মতো রোগ। লন্ডনের ক্যান্সার জেনেটিস্ট প্রফেসর ক্লেয়ার টার্নবুল এটিকে ভয়াবহ রোগ নির্ণয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ডাক্তাররা যখন শুক্রাণু দানের সঙ্গে যুক্ত শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার দেখতে পান, তখনই এই উদ্বেগটি সামনে আসে। ফ্রান্সে কর্মরত ক্যান্সার জেনেটিস্ট ড. এডউইজ ক্যাসপার জানিয়েছেন, আমাদের অনেক শিশুই ইতিমধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। কেউ কেউ একাধিক ক্যান্সারে ভুগেছে এবং কেউ কেউ খুব অল্প বয়সে মারাও গেছে।

এই দাতার শুক্রাণু ইউরোপের ১৪টি দেশের ৬৭টি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং কমপক্ষে ১৯৭টি শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানা যায়। এই সংখ্যা চূড়ান্ত নাও হতে পারে, কারণ সব দেশের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

ইউরোপীয় স্পার্ম ব্যাংক স্বীকার করেছে, কিছু দেশে শুক্রাণু ব্যবহারের নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে। যেমন, বেলজিয়ামের সীমা হলো ছয়টি পরিবার, অথচ এই দাতার ক্ষেত্রে ৩৮ জন নারী তা ব্যবহার করেন, যার ফলে ৫৩টি শিশুর জন্ম হয়।

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যালান পেসি এই ঘটনাকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, দেশগুলি আন্তর্জাতিক স্পার্ম ব্যাংকগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, কিন্তু একজন দাতার শুক্রাণু কতবার ব্যবহার করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো আন্তর্জাতিক আইন নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সবকিছুর জন্য স্ক্রিনিং করা সম্ভব নয় এবং শুক্রাণু সরবরাহ বজায় রাখার জন্য একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।

এই ঘটনা আবারও শুক্রাণু ব্যবহারের কঠোর বিশ্বব্যাপী সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রজনন বিশেষজ্ঞরা এখন একজন দাতার জন্য ৫০টি পরিবারের সীমা রাখার প্রস্তাব দিচ্ছেন। তবে তারা মনে করেন, এটি বিরল জিনগত রোগ ঠেকানোর চেয়ে বরং শত শত শিশু সামাজিক ও মানসিক প্রভাব কমানোর জন্যই বেশি জরুরি।

পরিষদগুলির মতে, এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক ব্যবহার করা মানে বেশিরভাগ পিতাদের চেয়েও দাতার শুক্রাণু অনেক বেশি রোগের জন্য স্ক্রিন করা হয়ে থাকে।

সূত্র: বিবিসি

কিউএনবি/অনিমা/১০ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ৯:৫৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit