ডেস্ক নিউজ : সময় বয়ে চলেছে নিজের গতিতে, আর ক্যালেন্ডারের পাতায় উঁকি দিচ্ছে ২০২৬ সাল। আসন্ন এই বছরটি বিশ্ববাসীর জন্য হতে চলেছে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক পালাবদলের এক সন্ধিক্ষণ।
মহাকাশে চাঁদের চারপাশে মানুষের পরিভ্রমণ থেকে শুরু করে খেলার মাঠে ফুটবলের মহাযজ্ঞ; সব মিলিয়ে ২০২৬ সাল হবে এক ঘটনাবহুল অধ্যায়। তবে এই সবকিছুর উপরে ছায়া ফেলছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদায়ী বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে ২০২৬ হতে পারে ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণ বছর। জাতিসংঘের হিসেবে ২০২৯ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছর চরম উষ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা আশি শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের কপ-৩০ সম্মেলনের পর এখন সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার আয়োজিত জীবাশ্ম জ্বালানি বর্জন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দিকে। তরুণ প্রজন্মের জলবায়ু আন্দোলন এই বছরে নতুন কোনো মোড় নেয় কি না, সেটিও দেখার বিষয়।
ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য ২০২৬ সালের মূল আকর্ষণ হলো ফুটবল বিশ্বকাপ। ইতিহাসের বৃহত্তম এই আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মাটিতে। ৪৮টি দেশের অংশগ্রহণে ১০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই ফুটবলীয় উন্মাদনা। একদিকে যেমন কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্স গতবারের হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া থাকবে, অন্যদিকে ৪১ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো চাইবেন তার সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে। তবে এই টুর্নামেন্টে রাজনীতির রঙও লেগে থাকতে পারে, কারণ স্বাগতিক দেশগুলোর মধ্যে অভিবাসন ও শুল্ক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে। মাঠের লড়াইয়ে এবার দেখা যাবে উজবেকিস্তান ও কিউরাসাওয়ের মতো নতুন মুখদেরও। তবে ফিফার টিকিটের বর্ধিত দাম সাধারণ সমর্থকদের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ২০২৬ সাল হবে অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কতদিন টিকবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না। গাজার পুনর্গঠন এবং সেখানে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এখনো অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে গেছে। এর মধ্যেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে পারে এ বছরেই। নভেম্বরের মধ্যে ইসরায়েলে নির্বাচন হওয়ার কথা, আর দুর্নীতির মামলা ও যুদ্ধকালীন ব্যর্থতার দায়ে কোণঠাসা নেতানিয়াহু নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে নতুন কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেন কি না, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় পরীক্ষা। যদিও তিনি নিজে ব্যালটে থাকছেন না, তবে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা বা হারানো তার পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ ঠিক করে দেবে। রিপাবলিকানরা যদি হাউজ বা সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো আইনি ও প্রশাসনিক বাধার মুখে পড়বে। ডেমোক্র্যাটরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পের প্রভাব কমানোর স্বপ্ন দেখছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে ২০২৬ সাল হবে চাঁদের বছর। নাসার বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস-২ মিশন এ বছরের এপ্রিলের মধ্যেই চাঁদের কক্ষপথে চারজন নভোচারীকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এটি কয়েক দশক পর মানুষের পুনরায় চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পথে একটি বিশাল ধাপ। পিছিয়ে নেই চীনও; তাদের চ্যাঙ-ই-৭ মিশন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গবেষণার জন্য উৎক্ষেপণ করা হবে। ভারতও তাদের নিজস্ব মহাকাশ অভিযানের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ২০২৬ সাল কেবল একটি সাল নয়, বরং মানব সভ্যতার সামনের দিনগুলোর গতিপথ নির্ধারণের এক বিশেষ মুহূর্ত হতে যাচ্ছে।
কিউএনবি /অনিমা/ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ১১:২২