রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্পকে কেন দেওয়া হলো ফিফা ‘শান্তি পুরস্কার’?

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৫৫ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবলের ‘একত্রীকরণ শক্তি’ তুলে ধরার কথা বলে ফিফা যে প্রথমবারের মতো ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’ চালু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়েছে, তা বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্ক, ক্ষোভ ও উপহাসের জন্ম দিয়েছে। ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো হঠাৎ করেই এই পুরস্কারের ঘোষণা দেন। বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ অভূতপূর্ব—পুরস্কারটির কোনো পূর্বঘোষণা, নিয়ম, প্রক্রিয়া বা পরিষ্কার মানদণ্ড আগে কখনোই ছিল না। এমনকি ফিফা কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্যও দাবি করেন, তারা এ পুরস্কার সৃষ্টির বিষয়টি অনুষ্ঠান শুরুর আগ পর্যন্ত জানতেনই না। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি প্রচারমূলক ভিডিওতে জানানো হয়, ’বিশ্ব শান্তিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ’ প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হবে। ঠিক তারপরই ইনফান্তিনো মঞ্চে ট্রাম্পকে ডেকে এনে একটি মেডেল পরিয়ে দেন এবং তাকে ’পাঁচ বিলিয়ন ফুটবল ভক্তের প্রতিনিধিত্বকারী’ বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প তার বক্তব্যে পুরোনো দাবি অনুযায়ী ’আটটি যুদ্ধ শেষ করা ও লাখো মানুষকে রক্ষা করার’ কথা পুনরাবৃত্তি করেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এটিকে তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন—কারণ পুরস্কারটির কোনো কাঠামো নেই, নেই কোনো নির্বাচন বা যাচাই পদ্ধতি; সবকিছুই যেন ’তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি’।  

অনেকে পুরস্কারটিকে ’রাজনৈতিক নাটক’, ’শান্তির ধারণার প্রতি অপমান’ এবং ’শ্বেত ধোলাইয়ের চেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করেন। অনেক মন্তব্যে বলা হয়, ট্রাম্পকে খুশি রাখতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ফিফা ’নিজের মতো করে একটি পুরস্কার বানিয়ে নিয়েছে’। ফিফা দীর্ঘদিন ধরে খেলোয়াড়দের ক্ষুদ্র মানবিক বার্তার জন্যও জরিমানা বা সতর্কবার্তা দিয়েছে—গাজা যুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি বাক্য লেখার দায়েও শাস্তির নজির আছে। অথচ একই ফিফা এবার পুরস্কার দিচ্ছে এমন এক প্রেসিডেন্টকে, যার নীতি ও কর্মকাণ্ড সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু আন্তর্জাতিক সংঘাত, সামরিক পদক্ষেপ এবং মানবাধিকার বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত। এদিকে মানবাধিকার কর্মী ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এটিকে ’স্পষ্ট দ্বৈতমানদণ্ড’

ও ’ফিফার রাজনৈতিক ব্যবহারের নতুন প্রমাণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইনফান্তিনোর সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা বহুদিন ধরেই আলোচনার বিষয়। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিকালীন বহুবার তাদের বৈঠক, ইনফান্তিনোর বিভিন্ন মার্কিন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, এমনকি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাবের কথাও তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন। ফিফার অভ্যন্তরীণ কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ট্রাম্প নোবেল না পাওয়ায় তার বিকল্প হিসাবে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার তৈরির চাপ ছিল, এবং ইনফান্তিনো দীর্ঘদিন ধরেই সে সুযোগ খুঁজছিলেন। ফিফা আগেও দুর্নীতি, প্রভাব খাটানো এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে। এবার একটি আগাম ঘোষণা ছাড়া ’শান্তি পুরস্কার’

তৈরি করে ট্রাম্পকে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত। অনেকেই বলছেন, ফিফার ’রাজনীতি থেকে দূরে থাকার’ দাবি এখন শুধুই প্রচারমূলক স্লোগান। ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ফিফার অর্থনৈতিক স্বার্থ এই পুরস্কারের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্পকে ফিফার শান্তি পুরস্কার দেওয়া কেবল ফিফার নিরপেক্ষতার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সংস্থাটিকে নতুন বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বহু সমালোচকের মতে, এ পুরস্কার শান্তির স্বীকৃতি নয়—বরং বিশ্ব ক্রীড়া অঙ্গনের রাজনৈতিক ব্যবহারের আরেকটি উৎকট উদাহরণ। 

 

 

কিউএনবি/মহন/৭ ডিসেম্বর ২০২৫/বিকাল ৪:২৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit