বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন

এক বছরেও মেলেনি হৃদয়ের লাশ, শহীদের স্বীকৃতিও না

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ৮২ Time View

ডেস্ক নিউজ : গোপালপুরের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. হৃদয় (২০)। নিজের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের হাল ধরতে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে যান তিনি। সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। অল্প সময়েই থেমে যায় তার স্বপ্নযাত্রা। পরিবারের দাবি, সরকার পতনের পর বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান হৃদয়। এক বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি তার লাশ।

গত বছর ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন হৃদয়। ওই দিন পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের গুলিতে হৃদয় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং পুলিশ সদস্যরা তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি গলির ভেতর নিয়ে যান।

পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর পুলিশ হৃদয়ের লাশ গুম করে। ভাইয়ের লাশ না পাওয়ায় বিচার তো দূরের কথা, একটি কবরস্থান দেখার আশাও অধরাই থেকে গেছে পরিবারটির কাছে। এখনো তারা জানেন না হৃদয়ের কবর কোথায়, কিভাবে তাকে দাফন করা হয়েছে। হৃদয়ের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের আলমনগর মধ্যপাড়া গ্রামে। বাবা লাল মিয়া একজন দিনমজুর, মা রেহেনা বেগম গৃহিণী। হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজের (প্রথম বর্ষশিক্ষার্থী ছিলেন

ঘটনার দিন হৃদয়ের সঙ্গে ছিলেন তার বোনের স্বামী ইব্রাহিম হোসেন। তিনি জানান, আমরা গাজীপুরে একসঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। ওই দিন বিজয় মিছিলে গিয়েছিলাম দুজনেই। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে হৃদয় নিহত হয়। আমি ভয়ে এগোতে পারিনি। রাতেই তার লাশ গুম হয়ে যায়। প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ফুটেজেও দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা হৃদয়কে সড়কে লাঠিচার্জ ও মারধর করেছে। পরবর্তীতে এক পুলিশ সদস্য তার দিকে বন্দুক তাক করে গুলি চালায়। রক্তাক্ত হৃদয়কে পরে গলির ভেতর নিয়ে যেতে দেখা যায়।

হৃদয়ের মা রেহেনা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই। আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। কিস্তিতে কেনা গাড়ির টাকাও এখনো শোধ হয়নি। আমার ছেলে বেঁচে থাকলে সংসারের সব দায়িত্ব নিতে পারত। বোন জেসমিন আক্তার বলেন, হৃদয়ের আশা ছিল পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে। এখন আমরা লাশই খুঁজে পাচ্ছি না। প্রশাসন মামলা নিলেও তদন্তের অগ্রগতি নেই।

বাবা লাল মিয়া বলেন, আমি কিছু চাই না, শুধু আমার ছেলের হাড়গোড় ফেরত দিক, যেন কবর দিতে পারি। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতি চাই। এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুহিন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়। মামলার অংশ হিসেবে গত ২৪ জুলাই গাজীপুরের তুরাগ নদীতে হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। হৃদয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে হুকুমের আসামি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও আড়াই থেকে তিনশ জনকেও আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৫ আগস্ট ২০২৫/রাত ৮:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit