লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : ঘরোয়া চিকিৎসার অন্যতম জনপ্রিয় উপাদান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার (এসিভি)। রান্নার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের নানা সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এসিভি নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরের নানা উপকার হতে পারে বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু কথা হচ্ছে—প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানিতে এসিভি মিশিয়ে খেলে আদৌ কি শরীরে পরিবর্তন আসে? চলুন জেনে নেওয়া যাক, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে কেমন শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়, তা বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় তুলে ধরেছেন—
১. রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় এসিভি
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সহায়তা করে, যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন, তাদের ক্ষেত্রেও এসিভি রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, যা বার্ধক্য ও বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এসিভি রক্তে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে। বিশেষত যারা ডায়াবেটিস বা চর্বিজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করে এসিভি
প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে এসিভি খেলে ওজন কমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসিভি খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায়। এটি খাওয়ার পর ১২০ মিনিট পর্যন্ত ক্ষুধা দমন করে এবং পরবর্তী ৩ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতাও কমিয়ে দেয়।
৩. হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এসিভি
বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। এসিভি খাওয়ার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে, যা হৃদযন্ত্রের পক্ষে ইতিবাচক।
৪. এসিভি ত্বকের উন্নতি করে
প্রাকৃতিক অ্যাসিড হিসেবে এসিভি শুষ্ক ত্বক ও একজিমার মতো সমস্যায় কার্যকর হতে পারে। পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এটি শরীরের অভ্যন্তর থেকে ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং স্কিন ব্যারিয়ার মজবুত করে। তবে যাদের ত্বকে ইতোমধ্যে ক্ষত আছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৫. এসিভি ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংসে কার্যকর ভূমিকা রাখে
এসিভি বহুদিন ধরেই প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিছু নির্দিষ্ট জীবাণু যেমন E. coli প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। এটি অনেকেই ব্যবহার করেন পায়ের নখের ফাঙ্গাস, উকুন, কানের ইনফেকশন ও আঁচিল নিরাময়ে। এমনকি খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এসিভি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
কীভাবে খাবেন এবং কি পরিমাণে খাবেন
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসিভি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো রান্নার মধ্যে ব্যবহার করা। যেমন সালাদ ড্রেসিং বা ঘরে তৈরি মেয়োনেজে মেশানো। সরাসরি খাওয়ার জন্য ১-২ চা চামচ ভিনিগার একটি বড় গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত এসিভি গ্রহণ করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়, পাকস্থলীর জ্বালা বা ওষুধের সঙ্গে ইন্টার-অ্যাকশনের সম্ভাবনা থাকে। তাই শুরুতে কম মাত্রা থেকে খাওয়া ভালো। এসিভি কোনো ম্যাজিক নয়, তবে একটি সুস্থ অভ্যাসে পরিণত করলে এটি স্বাস্থ্যকে বহুমাত্রিকভাবে উপকৃত করতে পারে।
কিউএনবি/আয়শা/২৫ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৪:২৩