সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন

হামাসের কাছে নাকাল ইসরায়েলেল অত্যাধুনিক মারকাভা ৪

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫
  • ১৭ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাবালিয়ায় ‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনার’ মধ্যে ইসরায়েলের আধুনিকতম ট্যাংক মারকাভা ৪ ধ্বংস হয়েছে। ঘটনাটি আবারও তুলে ধরেছে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সামরিক দুর্বলতা এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রণকৌশলের জটিলতা।

রবিবার গাজার উত্তরের শহর জাবালিয়ায় হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের এক জটিল অভিযানে ইসরায়েলের একটি মারকাভা ৪ ট্যাংক সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়। এতে তিনজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।

নিহত সেনারা হলেন সার্জেন্ট শোহাম মেনাহেম (২১, ইয়ারডেনা), সার্জেন্ট শ্লোমো ইয়াকির শ্রেম (২০, এফরাত) এবং সার্জেন্ট ইউলি ফ্যাক্টর (১৯, রিশন লেঝিওন)।

ইসরায়েলি বাহিনী এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি ট্যাংকটি কীভাবে ধ্বংস হয়েছে—এটি কি এন্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে, নাকি নিচে পুঁতে রাখা বিস্ফোরকে। তবে ঘটনাটি স্পষ্ট করেছে যে আল-কাসাম ব্রিগেডের অপারেশন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কৌশলগত ও জটিল।

মারকাভা ৪: এক নজরে

ইসরায়েলি সামরিক শক্তির গর্ব বলে পরিচিত মারকাভা ৪ ট্যাংক ২০০৪ সালে চালু হয়। এটি ৬৫ টনের একটি ভারী মূল যুদ্ধ ট্যাংক, যাতে চারজন ক্রু সদস্য থাকে। মূল অস্ত্র একটি ১২০ মিমি স্মুথবোর কামান, যা বিভিন্ন ধরনের উচ্চ বিস্ফোরক, আর্মার-পিয়ার্সিং ও গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম।

ট্যাংকটিতে রয়েছে উন্নত কম্পোজিট আর্মার, ফ্রন্ট-ইঞ্জিন ডিজাইন (যা সামনে বিস্ফোরণ হলে ক্রুদের রক্ষা করে), মোডুলার প্যানেল এবং শহুরে যুদ্ধের জন্য আদর্শ নানা ব্যবস্থা।

সুরক্ষা ব্যবস্থা

মারকাভা ৪-এ রয়েছে ‘ট্রফি’ (Trophy) নামের উন্নত অ্যাকটিভ প্রোটেকশন সিস্টেম, যা রাডার দ্বারা শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট শনাক্ত করে মাঝপথেই তা ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া আছে স্লাট আর্মার, স্পেসড আর্মার, স্মোক গ্রেনেড লঞ্চার ও ইনফ্রারেড জ্যামার, যা ট্যাংককে নানা দিক থেকে সুরক্ষা দেয়।

২০২৩ সালে চালু হওয়া মারকাভা ৪ বারাক সংস্করণে আরও উন্নত সেন্সর ও ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে।

দুর্বলতা

তবে বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ‘অদম্য’ ট্যাংক যে অপ্রতিরোধ্য নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে বহুবার। বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে—যেখানে ভবনের ছাদ থেকে ড্রোন বা আইইডি দ্বারা হামলা হয়—মারকাভা ৪ এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।

‘ট্রফি’ সিস্টেমটি ওপর দিক থেকে আসা হামলা ঠেকাতে দুর্বল এবং এর প্রতিক্রিয়া বিস্ফোরক হওয়ায় নিকটবর্তী পদাতিক সেনারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। একই সঙ্গে সিস্টেমটি পুনরায় লোড করতে হয়, যার ফাঁকে ট্যাংক আক্রমণের শিকার হতে পারে।

একেকটি ট্রফি সিস্টেমের দাম ১০ লক্ষ ডলারেরও বেশি, যা প্রতিপক্ষের কম খরচের অস্ত্রের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবেও অকার্যকর।

বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে মারকাভা ৪

২০২৩ সালের ‘আল-আকসা ফ্লাড’ অভিযানের প্রথম দিনেই হামাস ১৪টি মারকাভা ৪ ট্যাংক ধ্বংস বা দখল করে। সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা নিরস্ত্র অবস্থায় ট্যাংকের ওপরে উঠে ইসরায়েলি সেনাদের বন্দি করে।

পরে আরও ভিডিও প্রকাশিত হয় যেখানে দেখা যায়, যোদ্ধারা দৌড়ে গিয়ে ট্যাংকের নিচে বিস্ফোরক বসিয়ে ফিরে আসে এবং মুহূর্তেই সেই ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়।

মারকাভা ৪ হয়তো প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যাধুনিক, কিন্তু গাজা ও লেবাননের শহুরে রণক্ষেত্রে এটি প্রতিপক্ষের সৃজনশীল কৌশলের সামনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, আর্মার ও সেন্সরের চেয়েও কার্যকর হয়ে উঠছে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মাটি আঁকড়ে থাকা সাহস ও চতুরতা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবির বিপরীতে বাস্তবতা বলছে—মারকাভা ৪ এর পতন এখন আর ‘বিরল’ ঘটনা নয় বরং প্রতিদিনের এক নতুন বাস্তবতা।

সূত্র: প্রেস টিভি

কিউএনবি/অনিমা/১৬ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৪:১০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit