মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু ২ঘন্টায় বিলীন ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ ৮টি বসতবাড়ীর

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি ।
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ১ Time View

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : কোন কিছু না বুঝতেই আকস্মিক পদ্মার আগ্রাসী থাবায় জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। ২ঘন্টার এই ভয়াবহ পদ্মার ভাঙ্গনে বাঁধের পাশে থাকা ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ১টি টিনসেট বাড়ীর ৮টি কক্ষ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় অনেক চেষ্টা করেও শ্রমিক সংকট ও বৈরি আহাওয়ার কারনে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ঘর রক্ষা করতে পারেনি। চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যায় সবকিছু। ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে পদ্মার তীরবর্তী আলমখার কান্দি, হাজী ওসিমুদ্দিন মাদবর কান্দি ও স্থানীয় মঙ্গল মাঝির বাজার।

এদিকে তাৎক্ষনিক ভাঙ্গন রোধে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে। অপর দিকে আজ সকালে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো: ওয়াহিদ হোসেন, পুলিশ সুপার মো: নজরুল ইসলাম ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার একে এম নাসির উদ্দিন কালু জাজিরা উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের খোজ খবর নেন।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝির ঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১১০ কোটি টাকা ব্যায়ে দুই কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর পর ২০২৪ সালের সেপ্টম্বর পর্যন্ত ওই এলাকায় পদ্মার ভাঙ্গন দেখা যায়নি। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের এই বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার নদীগর্ভে ধসে যায়। পরে ধসে যাওয়া বাঁধটির সংস্কারে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হলে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ৮ জুন সকালে একই স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়ে। পরে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে নতুন করে জিওব্যাগ ডাম্পি করে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর পর গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নতুন করে রক্ষা বাঁধের মঙ্গলমাঝির ঘাট সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ করে আবারও ভাঙ্গন শুরু হয়। স্থানীয়রা কোন কিছু বুঝার আগেই ২ঘন্টার এই ভয়াবহ ভাঙ্গনে প্রায় ১৫০ মিটার রক্ষা বাঁধ, পদ্মাতীর সংলগ্ন স্বপন মাদবরের একতলা ৮কক্ষের ১টি পাকা ঘর, রাজা মাদবরের ১টি ঘর, শুকুর খালাসির হার্ডওয়্যারের দোকান, ফরিদ মাদবরের সারের দোকান, ফিরোজ মাঝির মেশিনারিজ দোকান, সাত্তার খার কাঠালের গোডাউন, সালাম পোদ্দারের চায়ের দোকান, শুকুরের চায়ের দোকান, নোয়াব আলী শেখের মুদি মালের গোডাউন, মিন্টুর সেলুন, স্বপনের সেলুনসহ ১২ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গন আতঙ্কে নদী তীরবর্তী আরও অন্তত ২০টি বসতঘর ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে মঙ্গল মাঝি বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজ শেখ ও আবু আলেম শেখ ও মজিবুর হাওলাদার জানান, বিকাল সাড়েটার দিকে বাজারের অনেক ব্যবসাীয় দুপুরের খাবার ক্ষেতে গেছে, আবার অনেকে বাজারেই অবস্থান করছে। এর মধ্যে হঠাৎ দেখি লোকজন ছোটাছুটি করছে। দোকান বন্ধ না করেই দৌরে গিয়ে দেখতে পাই একের পর এক ঘর নদীতে পরে যাচ্ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ঘরগুলোর মালামাল সরানোর। কিছু কিছু ঘরের মালামাল সরাতে পারলেও চোখের সামনেই অধিকাংশ ব্যবসা প্রষ্ঠিানের মালামালসহ পুরো ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পূর্ব নাওডোবা ইউপি চেয়ারম্যান মো: আলতাফ খান বলেন, পদ্মা নদীর গতীপথ পরিবর্তনের কারনে এই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একে একে এই বাঁধে তিনবার ভাঙ্গনের সম্মক্ষীন হওয়ায় এই এলাকার নদী তীরবর্তী গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে নাওডোবা এলাকার পদ্মা তীরবর্তী দুইটি গ্রাম ও মঙ্গলমাঝির হাট । সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবী পদ্মা পারের এই এলাকার মানুষের জন্য দ্রুত স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মান করে ভাঙ্গনের কবল থেকে আমাদেরকে রক্ষা করা হোক।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, এই বাধঁটি নির্মান করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বাঁধটিতে আরও ২বার ধস হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে ২টি প্যাকেজে ৫৯ লাখ টাকা ব্যায়ে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। গতকাল পূণরায় বাঁধটির আরও একটি অংশ ধসে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভাঙ্গন রোধে জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছি। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত ১২ পরিবারের মাঝে নগদ ৫হাজার করে টাকা ও ১৬ পরিবারকে ৬ হাজার করে টাকার চেক প্রদান করেছি।

 

কিউএনবি/আয়শা//০৮ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৪৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit