শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন

ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করুন, নইলে ইসরাইলি হামলার ঝুঁকি নিন: ইরানকে সৌদির সতর্কতা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫
  • ৫০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান তেহরান সফর করেন। সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ইরানি কর্মকর্তাদের কাছে সৌদি বাদশাহর একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অন্যথায় ইসরাইলের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা আছে বলেও তেহরানকে সতর্ক করা হয়।

সৌদির দুটি সূত্র ও ইরানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ উদ্বিগ্ন।  ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি গত মাসে ছেলে প্রিন্স খালিদ বিন সালমানকে তেহরান সফরে পাঠান। সূত্র জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল তেহরানে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সৌদির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উপস্থিত ছিলেন।
 
৩৭ বছর বয়সি সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তেহরান সফরের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও, বাদশাহ সালমানের গোপন বার্তার বিষয়বস্তু আগে প্রকাশিত হয়নি। চারটি সূত্র মতে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূত থাকা প্রিন্স খালিদ ইরানি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেছেন, পরমাণু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনায় না-ও থাকতে পারেন।
 
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তেহরান সফরের এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে ট্রাম্প এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সমর্থন পাওয়ার আশায় ইসরাইলের নেতা ওয়াশিংটন ভ্রমণ করেছিলেন।
 
চারটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রিন্স খালিদ ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছেন, ট্রাম্পের দল দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাইবে এবং কূটনীতির চ্যানেল দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে। উপসাগরীয় দুটি সূত্র মতে, সৌদি মন্ত্রী বলেছেন, ইসরাইলি হামলার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো ভালো হবে। দুটি উপসাগরীয় এবং আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ বিদেশি কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে, সৌদিমন্ত্রীর যুক্তি ছিল গাজা এবং লেবাননের সাম্প্রতিক সংঘাতে এই অঞ্চল এরইমধ্যে বিপর্যস্ত। ফলে নতুন আরেকটি সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
 
এ বিষয়ে জানতে সৌদি আরব এবং ইরানের কর্তৃপক্ষ রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স খালিদের এই সফর ছিল দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সদস্যের প্রথম ইরান সফর। রিয়াদ এবং তেহরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ ছিল। ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুটি দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়।
 
রয়টার্স বলছে, গত দুই বছর ধরে গাজায় তেহরানের মিত্র হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর ইসরাইলের ব্যাপক সামরিক হামলা এবং  ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের ফলে ইরানের আঞ্চলিক অবস্থান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ফলে ইরানের তেল-নির্ভর অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হেনেছে।
 
বৈরুতের কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইরান বিশেষজ্ঞ মোহানাদ হাগে আলী বলেন, তেহরানের দুর্বলতাই সৌদি আরবকে কূটনৈতিক প্রভাব প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছে, যাতে আঞ্চলিক সংঘাত এড়ানো যায়। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ইরান যুদ্ধ এড়াতে চায় কারণ যুদ্ধ এবং সংঘাত তাদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
 
চুক্তি চায় ইরানও
 
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বার্তা ইরানের নেতৃত্বের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে তা জানা সম্ভব হয়নি। চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বৈঠকে পেজেশকিয়ানের প্রতিক্রিয়া ছিল- ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমাতে একটি চুক্তি চায়।
 
প্রসঙ্গত, ওমানের মধ্যস্থতায় পরমাণু ইস্যুতে নতুন একটি চুক্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার (২৩ মে) ইতালির রাজধানী রোমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই জানায়, আলোচনায় অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।
 
যদিও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে মতানৈক্য রয়েই গেছে। এসব বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইরানিরা জানিয়েছেন, চুক্তি হোক বা না হোক, কোনো অবস্থাতেই পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হবে না।

 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩০ মে ২০২৫, /বিকাল ৫:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit