ডেস্ক নিউজ : একসময় মাটির হাঁড়ি, কলস, থালা, প্রদীপ, ফুলদানি- এসব ছিল প্রতিটি ঘরের নিত্য ব্যবহারের জিনিস। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তনের ফলে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে, মেলামাইন, প্লাস্টিক, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। এই কারণে কমেছে মৃৎশিল্পের চাহিদা, কাঁচামালের চড়ামূল্য, আর্থিক অভাবে বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ধুনটের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক সময় গড়ে উঠেছিল অনেক কুমারপাড়া। সেখানে কুমার সম্প্রদায় মাটি দিয়ে তৈরি করত বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার্য পণ্য। এখন সেই পাড়াগুলোতে কেবল কিছু বয়স্ক শিল্পীই রয়ে গেছেন, যারা আজও নেহাত জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
স্থানীয় কুমার কুড়ান পাল বলেন, ‘আগে পূজা, মেলা বা বাজারে আমাদের তৈরি পণ্যের ভালো চাহিদা ছিল। এখন শিশার হাঁড়ি-পাতিল আর কেউ কিনতে চায় না। ইলেক্টিক চুলা আসার পর থেকে আমাদের মাটির জিনিসগুলো তেমন আর বিক্রি হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপযুক্ত মাটি পাওয়া এখন কঠিন, আর খরচ বেড়েছে বহুগুণ। মাটির দাম, খোড়ার ভাড়া সবই বেড়েছে- লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি ফিরে পাওয়াই কষ্টকর।’
অন্য এক কুমার সন্তোষ পাল বলেন, ‘বিশ হাজার টাকার মাটি কিনে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করি, খাওয়া-পড়া শেষে আর টাকা হাতে থাকে না। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাই না। যদি কেউ পাশে দাঁড়াত, তাহলে হয়তো এই শিল্পটা বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।’
স্থানীয় দোকানি উজ্জ্বল পাল বলেন, ‘এখন আমাদের মাটির পন্য দ্রব্য তেমন বিক্রি হয় না।ছোটবেলা থেকে এই ব্যবসা করে আসছি এটা আমাদের বংশগত ব্যবসা তাই ছাড়তে পারছি না।’স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারিভাবে মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো প্রশিক্ষণ, ঋণ বা সহায়তা কার্যক্রম নেই। ফলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প টিকে থাকাটা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খ্রিস্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ‘মৃৎশিল্প পেশায় নিয়োজিতদের জন্য আপাতত সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ নেই, তবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পেশাজীবীদের জন্য সমাজসেবার বরাদ্দের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে হবে।’
মৃৎশিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকার, সমাজ ও সংস্কৃতিমনা মানুষদের একযোগে উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
কিউএনবি/আয়শা/১১ মে ২০২৫, /রাত ৮:০৮