শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কড়াকড়ি, সর্বনিম্ন শরণার্থী গ্রহণের সীমা ঘোষণা ট্রাম্পের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৫০৬ জন শেখ হাসিনাসহ ২৬১ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি সংস্কার কমিশন বয়কট করা উচিত ছিল বিএনপির : আব্দুল্লাহ তাহের শার্শা বিএনপি’র আয়োজনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত আশুলিয়ায় ধামসোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের লিফলেট বিতরণ  মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার ৭৯০ বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের বিরুদ্ধে ইসরাইলে ব্যাপক বিক্ষোভ গণভোট ও নির্বাচন নিয়ে যে বার্তা দিলেন প্রেস সচিব আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার : ডিএমপি

প্রতিবাদের পরও বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫
  • ১৬০ Time View

ডেস্ক নিউজ : প্রতিবাদ ও সমালোচনার পরও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দুবাইভিত্তিক অপারেটর কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদি কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে (আরএসজেটিআই) দেওয়া পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিটিসি) অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শনিবার প্রথমবারের মতো এই টার্মিনালে আমদানি পণ্য নিয়ে ভিড়েছে বিদেশি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল এবং লালদিয়ার চরও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

এদিকে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম চট্টগ্রাম সফরে এসে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। এই বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল রয়েছে। এগুলো হলো-চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। এ ছাড়াও সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড (এসসিওয়াই), ওভার ফ্লো ইয়ার্ড, জেনারেল কার্গো বার্থসহ (জেসিবি) বেশকিছু ইয়ার্ড রয়েছে।

যেখানে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ছাড়াও বাল্ক কার্গোও খালাস হয়ে থাকে। সিসিটি ও এনসিটি সাইফ পাওয়ারটেক পরিচালনা করছে। পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সৌদির আরএসজেটিআইকে। বে-টার্মিনাল ও লালদিয়ার চর বিদেশি বিনিয়োগে চালু করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরও বিদেশি বিনিয়োগে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনাল নির্মাণ করে। বন্দরের মূল আয়ের ৬০ ভাগ আসে এই টার্মিনাল থেকে। এ টার্মিনালের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এই টার্মিনালের উৎপাদনশীলতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই একটি টার্মিনালেই ১ কোটি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এই টার্মিনালে বর্তমানে যে পরিমাণ ইক্যুইপমেন্ট আছে তা দিয়ে আগামী ১৫ বছর চালানো যাবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারই প্রক্রিয়া শুরু করে। সেই প্রক্রিয়াই বর্তমানে চলমান রয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, বন্দর শ্রমিক ফেডারেশন, জামায়াতে ইসলামী, এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিবাদ করে। তারা এনসিটিসহ লাভজনক কোনো টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও পাঠায়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু সে বিনিয়োগ হোক গ্রিন ফিল্ডে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনোমিক জোনগুলোতে বিদেশিরা এসে বিনিয়োগ করছে। ঠিক তেমনি আমাদের বে টার্মিনাল থেকে শুরু করে সীতাকুণ্ড-মীরসরাই ও মাতারবাড়িতে প্রচুর বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে। সেখানে বিনিয়োগ আসুক। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা লাভজনক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এনসিটি টার্মিনাল কেন বিদেশিদের দেওয়া হবে তা বোধগম্য নয়।

ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা তাদের লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব ভান্ডার খাত শেষ করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এমন ষড়যন্ত্র জামায়াত বাস্তবায়ন করতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজ করার সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। একই ভাবে এনসিটি দিয়ে দেওয়া হলে বন্দরের অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী জীবিকা হারাবেন। এনসিটির আশপাশে নৌবাহিনীর সামরিক ঘাঁটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এখানে বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পাড়বে।

এদিকে ২৪ এপ্রিল বন্দর দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মরিুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে। তবে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বন্দরের সেবার মান ও দক্ষতা বাড়বে এবং বড় অঙ্কের আর্থিক লাভ হবে। কারও চাকরি যাবে না। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার পরও সেখানে বাংলাদেশি জনবল কাজ করছে। উপরের লেভেলে বিদেশিরা কাজ করছেন।

বন্দর নিয়ে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বন্দরকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ হিসাবে গড়ে তুলতে চান প্রধান উপদেষ্টা।

এ জন্য বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে এর সক্ষমতাও বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বন্দর ঘিরে মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসবে। যেসব কোম্পানি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৬০ থেকে থেকে ৯০টি বন্দর হ্যান্ডলিং করছে তাদের সঙ্গেই আলোচনা চলছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে চায় সরকার।

প্রেস সচিব আরও বলেন, তরুণদের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হলে শুধু দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়; পুরো রিজিওনের ৩০-৪০ কোটি লোক এর সুফল ভোগ করবে। চট্টগ্রামের লালদিয়া, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরসহ পুরো অঞ্চলটাই বন্দরের উপযোগী।

তথ্য দিয়ে তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ও আশপাশের টার্মিনালগুলোর সক্ষমতা ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন টিইইউএস (২০ ফুট দীর্ঘ) কনটেইনার। এ সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে এই সক্ষমতা ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টিইইউএস-এ নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ ছয় গুণ বাড়ানো। বাংলাদেশকে ইকোনমিক হাব, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিই হচ্ছে এক নম্বর পূর্বশর্ত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও এরসঙ্গে জড়িত। তাই বন্দর নিয়ে আমরা যাই করি না কেন, তা যেন ভেবেচিন্তে দেশের স্বার্থে করি। সরকারকে এটা মাথায় রাখতে হবে।

 

কিউএনবি/আয়শা/০৬ মে ২০২৫, /সন্ধ্যা ৬:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit