শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম

বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বহু হতাহত-বিমান চলাচল বন্ধ

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৪ মে, ২০২৫
  • ৫৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তেলআবিবে দখলদার ইসরাইলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন আজ ইয়েমেনি প্রতিরোধ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এতে অন্তত ২ জন ইসরাইলি সেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।অন্যদিকে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এক নতুন মোড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

রোববার ইসরাইলি সূত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও প্রমাণসহ হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে টাইম অব ইসরাইল। ইরানী বার্তা সংস্থা মেহের জানিয়েছে, রোববার সকালে ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি দখলকৃত তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছেই আঘাত হেনেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমানবন্দরের পাশে বিশাল একটি ধোঁয়ার কুণ্ডলী উপরের দিকে উঠছে — যা ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের স্পষ্ট প্রমাণ। এই হামলার পর ইসরাইলি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বাতিল অথবা বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে। এমন একটি কৌশলগত স্থাপনায় হামলা ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

এদিকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিশ্চিত করেছে যে, তারা বেন গুরিওন বিমানবন্দর এলাকায় আঘাত হানা ইয়েমেনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। টাইম অব ইসরাইলের খবর অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে সেটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। 

এর জেরে তারা বিমান বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থতার তদন্ত করছে। আইডিএফ মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের প্রভাবের বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে এবং দুই সেনা সদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তদন্ত চলছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী ও অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করছে।

এদিকে হামলার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার না করলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি ইয়েমেনি আনসারুল্লাহ (হুথি) গোষ্ঠীর হামলার অংশ। কেননা, তারা সম্প্রতি গাজা সংকটের প্রেক্ষাপটে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী হামলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে তারা লোহিত সাগরে মার্কিন রণতরী ও ইসরাইলের কয়েকটি সামরিক ও বিমানঘাঁটিতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়েছে।যে কারণে মনে করা হচ্ছে, সর্বশেষ হামলাটিও একই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে চালানো হয়েছে। যার ফলে ইসরাইলের পক্ষে তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি ইয়েমেন সত্যিই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত হানে, তাহলে তা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার সূচনা করবে। ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ বা ‘অ্যারো’ প্রযুক্তি সাধারণত সাবসনিক বা সুপারসনিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা এখনো অনেক দেশের জন্যই কঠিন।

এদিকে ইয়েমেন শনিবার ঘোষণা দেয়, তারা লোহিত সাগর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেল পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার মাধ্যমে ইয়েমেন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, তারা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণাত্মক কৌশলও নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল ইসরাইলের ভেতরের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয় — এটি একটি বৃহৎ আঞ্চলিক সংকটের ইঙ্গিত। যেখানে ইয়েমেন, লেবানন, ইরানসহ একাধিক পক্ষ জড়িত হতে পারে।

অন্যদিকে ইয়েমেনি হামলার প্রেক্ষিতে আমেরিকা, জর্ডান, মিসর এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

কেন বেন গুরিয়নে হামলা?

বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ইসরাইলের বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেখানে একটি হামলা ইসরাইলের জাতীয় মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত।

ইয়েমেনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই হামলা প্রমাণ করে যে, ইসরাইলের গভীরে আঘাত হানার সামর্থ্য এখন ইরানঘনিষ্ঠ প্রতিরোধ জোটের রয়েছে — যা নতুন এক ‘মাল্টি-ফ্রন্ট যুদ্ধের’ বাস্তবতা সামনে আনছে।

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ মে ২০২৫, /রাত ৮:৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit