আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তার হুমকির রাজনীতি শুরু করেছেন। এবারের লক্ষ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শপথ গ্রহণের আগেই তিনি ইউরোপের ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছি, তাদের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে হবে। আমাদের তেল ও গ্যাস বৃহৎ পরিসরে কিনতে হবে। অন্যথায়, শুল্ক বসবেই!’
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি ২০২.৫ বিলিয়ন ডলার। ওই বছরে ইউরোপ থেকে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ ছিল ৫৫৩.৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে রপ্তানি ছিল মাত্র ৩৫০.৮ বিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতি মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চান ট্রাম্প।
ইউরোপের প্রতি ক্ষোভ
এর আগের মেয়াদেও ট্রাম্প ইউরোপের সমালোচনা করেছিলেন। তার মতে, ‘অনেক দিন ধরেই ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে আসছে, আর আমরা তা সহ্য করেছি।’ গতবার তিনি ন্যাটোতে অতিরিক্ত অর্থায়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছিলেন। এবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার মতে, শুল্কই যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবার সমৃদ্ধ’ করবে।
ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দেশ সবার কাছে হেরে যাচ্ছে। তিনি এর জন্য আগের প্রশাসনগুলোর ‘খারাপ চুক্তি’কে দায়ী করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘শুল্কই আমাদের দেশকে আবার ধনী করবে।’
অন্যান্য দেশের প্রতি হুমকি
ইউরোপ ছাড়াও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তিন বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন, মেক্সিকো, এবং কানাডাকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ইউরোপের পাল্টা পদক্ষেপ
ট্রাম্পের হুমকির পর ইউরোপ বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার চারটি দেশের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই দেশগুলো হলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং প্যারাগুয়ে। এই চুক্তি ৭০০ মিলিয়ন মানুষের উপকারে আসবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন দার লিয়েন চুক্তি স্বাক্ষরের পর ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বিশ্বের কিছু অংশ বিচ্ছিন্নতার দিকে যাচ্ছে। তবে এই চুক্তি ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে একটি বাণিজ্য সেতু তৈরি করবে।’
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘আবার সমৃদ্ধ’ হবে নাকি ‘সবার কাছে হারবে’—তা সময়ই বলে দেবে। তবে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
কিউএনবি/অনিমা/২০ ডিসেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:৫০