বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

মানবিকতা আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৫৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানবিকতা মুমিনের অন্যতম গুণ। মুমিন তার প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজে পেট পুরে খেতে পারে না। কারণ এটা আমাদের প্রিয় নবীর শিক্ষা নয়। কোরআনের শিক্ষা নয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও সেই খাবার অসহায়, এতিম ও বন্দিদের খাওয়ায়।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৮)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনে যুবাইর (রা.)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তিসহকারে আহার করে সে মুমিন নয়। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১১)

শুধু খাবারের ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের যেকোনো বিপদে মুমিনরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা করে। কারণ তারা জানে, মানুষের সেবা করেই আল্লাহকে পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি যদি মানুষকে কষ্ট দেয়, কিংবা কেউ সাহায্য চাইলে সাধ্য থাকা সত্ত্বেও তার সহযোগিতা না করে, উল্টো তাকে আরো কষ্টে ফেলে দেয়, তাহলে মহান আল্লাহ রাগান্বিত হবেন।

আবু হুরায়রা‌ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রূষা করোনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার সেবা-শুশ্রূষা করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক।

আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করোনি, তুমি কি জানতে না যে তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করলে আমাকে তার কাছেই পেতে।(মুসলিম, হাদিস : ৬৪৫০)

দুনিয়ায় যারা মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে, মানুষকে ভালোবাসে, তার মুমিন ভাইদের দোষত্রুটি গোপন রাখে, কঠিন কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদগুলোর মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদগুলোর কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬৯)

মুমিন কখনো কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে বিপদে ফেলতে পারে না। সারাক্ষণ মানুষের গিবত গেয়ে বেড়াতে পারে না। অন্যের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার সম্মান নষ্ট করার জন্য প্রপাগান্ডা চালাতে পারে না। বরং মুমিন তার অপর মুমিন ভাইয়ের দুঃখে দুঃখী হয়। কেউ বিপদে পড়লে তাকে উদ্ধার করার প্রাণপণ চেষ্টা করে।

কারণ মহান আল্লাহ সমগ্র মুমিন জাতিকে এক দেহের মতো বানিয়েছেন। ফলে দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে গোটা দেহ আক্রান্ত হওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সব দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’(মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)

একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য এমনই হওয়া উচিত। কারণ আমরা সবাই রাসুল (সা.)-এর উম্মত। ইসলাম নামক শক্ত ইমারতের একেকটি ভিত। সেই ভিতগুলো যদি আমরা নিজেরাই দুর্বল করে ফেলি, এটা আমাদের নিজেদের জন্যই বিপদের কারণ হবে। আবু মুসা (আশআরি) (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার একাংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (এর ফাঁকে) ঢোকালেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০২৬)

তাই প্রতিটি মুমিন যেমন পরস্পর দয়াশীল হবে, তেমনি আল্লাহর সব সৃষ্টির প্রতিও তারা সহনশীল হবে। সহনশীলতা, দয়াশীলতা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় চরিত্র। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)

মুমিনরা যেহেতু সর্বদা আল্লাহর রহমতের কাঙাল, তাই তারাও দুনিয়াবাসীর প্রতি অত্যন্ত সদয় হয়, মানবিক হয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই গুণটি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কিউএনবি/অনিমা/২৭ অক্টোবর ২০২৪,/দুপুর ১২:০৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit