লাওহে মাহফুজ সম্পর্কে কোরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় এটি একটি সম্মানিত কিতাব, যা লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। (সুরা আল-বারুজ ২১-২২) এ আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, কোরআনও লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত একটি আদি কিতাব।অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তাআলা জানেন যা কিছু আকাশে ও ভূমণ্ডলে আছে। এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ। (সুরা হজ ৭০)
লাওহে মাহফুজ কিসের তৈরি? এটি কত বড়? এর ধরন কেমন? এ বিষয়ে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, লাওহে মাহফুজ লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি। তার উপরাংশ আরশের সঙ্গে সংযুক্ত, নিম্নাংশ একজন সম্মানিত ফেরেশতার ওপর। হজরত আনাস (রা.) বলেন, লাওহে মাহফুজ হজরত ইসরাফিলের পিঠের ওপর। হজরত মাকাতিল (রহ.) বলেন, লাওহে মাহফুজ আরশের ডান দিকে অবস্থিত। (তাফসিরে কুরতুবি পৃষ্ঠা ২৯৮, খণ্ড ১৯)।
ইমাম সুয়ুতি (রহ.) বলেন, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা লাওহে মাহফুজকে একশ বছরের দূরত্বের পথ সমান সৃষ্টি করেছেন। (দুররুল মানছুর : খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৭৪)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, লাওহে মাহফুজের দৈর্ঘ্য আসমান-জমিনের সমান, প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমের সমান। আর তা নির্মিত হয়েছে সাদা মণিমুক্তা দ্বারা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৯৮)
আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হলো ‘কলম’। এরপর আল্লাহ সেই কলমকে আদেশ দেন যাতে তা লাওহে মাহফুজে সমস্ত কিছুর লিখিত বিবরণ সংরক্ষণ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, লাওহে মাহফুজ হচ্ছে আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এক নির্দিষ্ট স্থান, যেখানে প্রতিটি সৃষ্টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানুষের জীবনে লাওহে মাহফুজের ধারণা গভীর প্রভাব ফেলে। ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও, আল্লাহই চূড়ান্তভাবে সমস্ত ঘটনা নির্ধারণ করেন। এটি তাকদির বা ভাগ্যের বিশ্বাসের সাথে জড়িত। মুসলমানদের জন্য এই বিশ্বাস শান্তি ও আত্মনিবেদন বয়ে আনে, কারণ তারা জানে যে, তাদের জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্ত পূর্বেই আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত। তিনি তাদের জন্য সর্বদা মঙ্গলময় পরিকল্পনা করেছেন।
ইসলামি দার্শনিকরা লাওহে মাহফুজকে আল্লাহর চিরন্তন জ্ঞান ও সৃষ্টির প্রাক্কালে নির্ধারিত বিধান হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তারা বলেন যে, এই ফলক আল্লাহর অমর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতীক যা পরিবর্তনশীল নয়, এবং এতে লিপিবদ্ধ কোনো ঘটনাই বাতিল করা যায় না।
লাওহে মাহফুজ ইসলামি বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আল্লাহর সর্বজ্ঞান ও তার নিয়ন্ত্রণের শক্তির প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। এটি তাকদির বা ভাগ্যের ধারণার সাথে গভীরভাবে যুক্ত। মানুষের জীবনে শান্তি ও আত্মনির্ভরতার উৎস হিসেবে কাজ করে।