৫০ ঘন্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি শ্রমিকরা; চরম ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ
Reporter Name
Update Time :
বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪
৫৯
Time View
মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে প্রায় ৫০ঘণ্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসুচি পালন করছে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাগুলো উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। বুধবার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইলে গিয়ে এচিত্র দেখা গেছে। এরআগে, গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। যা দীর্ঘ ৫০ ঘন্টা পার হলেও অবরোধ তুলে নেয়নি তারা। এরফলে একদিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে চলাচলে চরম বেগ পোহাতে হচ্ছে উত্তর বঙ্গগামী পণ্যবাহী ট্রাক, জরুরী সেবাদানকারী পরিবহণ ও সাধারন মানুষদের। অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশের মাধ্যমে বার্ডস গ্রুপ লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশে কর্তৃপক্ষ জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ কারখানাতে কোন প্রকার কাজ নেই। এরপরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহত ভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিলো। শত চেষ্টা করেও নতুন কোন কাজের অর্ডার সংগ্রহ করতে পারেনি যা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। এমতাবস্থায় গত ২৮ আগস্ট থেকে গ্রুপটির আর এন আর ফ্যাশনস লিঃ, বার্ডস গার্মেন্টস লিঃ, বার্ডস ফেডরেক্স লিঃ এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লিঃ এর সকল সেকশনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ইপিজেড থেকে চন্দ্রা মুখী লেন ফাঁকা রয়েছে। তবে এ লেনে রিকশা,অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র চলতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এসবের চালকদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, শুধু নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক নয়, পাশাপাশি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর পয়েন্টও। যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল আটকা পড়েছে। তবে শিল্পাঞ্চলে এখন পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। সার্বিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারি রয়েছে।
অবরোধকারী শ্রমিকরা জানায়, গেল মাসের ২৮ তারিখ থেকে বার্ডস গ্রুপের সকল কারখানা লে-অফ করা হয়। শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে এবং সার্ভিস বেনিফিট সহ ক্ষতিপূরণ গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর দেয়ার কথা ছিল। চুক্তিমত শ্রমিকদের বেতন কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করলেও যে সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ করতে আরো তিন মাসের সময় চেয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। যার কারণে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (১১টা) মহাসড়ক বন্ধ রয়েছে।
এবিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ আইয়ুব আলী বলেন, শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন ও বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। তবে শ্রমিকদের কয়েকবার বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বকেয়া বেতন না পেয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গতঃ ২৭ আগস্ট বার্ডস গ্রুপের আরএনআর ফ্যাশন, বার্ডস গামের্ন্টেস লিমিটেড, বার্ডস ফেডরেক্স লিমিটেড কারখানায় কর্তৃপক্ষ এক নোটিশ দিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। সেসময় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও মালিকপক্ষের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের সব পাওনা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ পরিশোধের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এলে মালিকপক্ষ ফের ৩ মাসের সময় দাবি করে। পরে ওইদিনই শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতনের টাকা ও সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রাখে।