কাশি কী কী কীরণে হয়?
ঠান্ডা লাগা ছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাশির অজস্র কারণ আছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ চারটি-১. ইনফ্লামেটরি বা প্রদাহজনিত কাশি। মূলত শ্বাসনালী বা ফুসফুসে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে এই কাশির সৃষ্টি। ল্যারেনজাইটিস অথবা ফ্যারেনজাইটিস জাতীয় রোগ এই ধরনের কাশির জন্য দায়ী।
২. মেকানিক্যাল অর্থাৎ বাইরে বা ভিতর থেকে তৈরি হওয়া কোনও চাপের ফলে সৃষ্ট কাশি। ধরা যাক, শ্বাসনালীর ভিতরে কোনও টিউমার হয়েছে। তার চাপে কাশি হতে পারে। হৃদরোগের জন্য কাশিও একই পর্যায়ের।
৩. কেমিক্যাল অর্থাৎ সিগারেট, বিড়ি বা কোনও তামাক জাতীয় বস্তু গ্রহণ করার জন্য কাশি। যে কোনও গ্যাস যেমন, গাড়ির পোড়া কার্বন কিংবা ক্লোরিনের ঝাঁজালো গ্যাস অথবা কোনও কিছু পোড়া বস্তু থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে হওয়া কাশি এর উদাহরণ।
৪. থার্মাল – আবহাওয়া। হঠাৎ ঠান্ডা বা গরমের মধ্যে যাতায়াতের ফলে সৃষ্ট কাশি এর উদাহরণ। ঋতু পরিবর্তনের সময় এখন যে কাশি চারিদিকে মানুষের হচ্ছে তা এই ধরনের কাশির মধ্যে পড়ে।
চরিত্রগত ভাবে কাশি দু’রকমের-
১. ড্রাই বা শুকনো কাশি
২. প্রোডাকটিভ বা কফ উৎপাদক কাশি।
শুকনো কাশি হয় টিবির প্রথম অবস্থায়। এ ছাড়া ল্যারেনজাইটিস, ফ্যারেনজাইটিস বা ট্রাকিয়াটাইটিস হলে এই ধরনের কাশি হয়। আলজিহ্বা বড় হলেও এই কাশি হয়। অত্যন্ত বিরক্তিকর এই কাশির চরিত্র। সর্বক্ষণ কাশতে থাকেন রোগী। রাতের দিকে কাশির তীব্রতা বাড়ে। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে গলার রোগে নিয়মিত ভোগেন এমন মানুষদের এই ধরনের কাশি হয়।
অন্য দিকে, কফ উৎপাদক কাশির ক্ষেত্রে কফের পরিমাণ, রঙ, গন্ধ এবং সময় বিচার করে কাশির কারণ চিহ্নিত করেন চিকিৎসকেরা।
– কাশির সঙ্গে পুঁজের মতো কফ হলে বুঝতে হবে রোগীর ফুসফুসে ফোঁড়া হয়েছে।
– যদি কফের রঙ হলদেটে হয় বুঝতে হবে সংক্রমণজনিত কাশি।
– কালচে বা ধূসর রঙের হলে বুঝতে হবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বাতাসের ধুলোময়লা ঢুকে সংক্রমণ হয়ে কাশি হচ্ছে।
– লালচে-কালো রঙের কফ হলে বুঝতে হবে নিউমোনিয়ার জন্য কাশি হচ্ছে।
– কফের রঙ যদি গোলাপি হয় তা হলে কাশির কারণ ফুসফুসে পানি জমা।
– শরীরের অবস্থানগত কারণে কাশির হ্রাস-বৃদ্ধি হলে; যেমন ডান দিকে পাশ ফিরে শুলে যদি বেশি কাশি হয়, তখন বুঝতে হবে ফুসফুসে সমস্যা অথবা ব্রঙ্কাইটিস থেকে কাশি হচ্ছে।
এছাড়াও আছে অ্যালার্জিজনিত কাশি। বহু মানুষ আছেন যাঁদের ঋতু পরিবর্তনের সময় অ্যালার্জিজনিত কারণে কাশি হয়। সেই অ্যালার্জি ঠান্ডা থেকে, ধুলোবালি থেকে, ময়লা থেকে, ফুলের রেণু ইত্যাদি নানা কারণে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে ঘন ঘন আবহাওয়ার বদল, ঠান্ডা গরমের দ্রুত যাওয়া আসা থেকে এ জাতীয় কাশির জন্ম। এই ক্ষেত্রে কাশি একই সময়ে বহু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে নিজেকে ঠান্ডা লাগা থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার এই বদল মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরের পাশাপাশি উপরে আলোচিত জটিল নানান অসুখও আক্রমণ করতে পারে।
কী করবেন?
১. এসময় তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জামাকাপড় পড়তে হবে।
২. যাদের অ্যালার্জির ধাত তাদের ধুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩. যারা সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করেন তাদের তা বন্ধ করতে হবে।
৪. রোদে বা গরমে শরীর ঘেমে গেলেও এখনই এসি ব্যবহার করা যাবে না। ভেজা পোশাক খুলে গা মুছে পোশাক বদলে নিন।
৫. রাতে মাথার দিকে জানলা খুলে ঘুমাবেন না। গায়ে চাদর রাখতে হবে। কারণ, রাত যত বাড়বে ততই তাপমাত্রা কমবে।
৬. উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করুন। খুব সকালে বা রাতে গোসল না করাই ভালো।