কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ রঙ্গরসে ভরপুর, এরই নাম রংপুর। সেই রংপুর অঞ্চলের বৃহৎ জেলা কুড়িগ্রাম। ভাওয়াইয়া গানের ধাম, নদ-নদী কুড়িগ্রাম এর মানুষ একদা ভাওয়াইয়া,পল্লীগীতি, জারি সারি আর বেহুলা লখিন্দরের পালা গান নিয়ে বিনোদনের এক আবহের মাঝেই বাস করত। কিন্তু সেই কুড়িগ্রাম অভাব অনটন আর নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে আজ রঙ্গরসহীন হয়ে পড়েছে। বিনোদন কি ভুলতে বসেছে কুড়িগ্রামের মানুষ।
কুড়িগ্রামের বিনোদনপ্রেমী মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন কুড়িগ্রামে একটি বিনোদন পার্ক হোক। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার উদ্যোগে ইতোমধ্যে ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তে ‘ডিসি পার্ক’ নামে সেই কাঙ্খিত পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিশাল এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে বাধাগ্রস্ত করতে নামকরণ নিয়ে কিছু লোক ফেসবুকে কমেন্টের মাধ্যমে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার পাশে এসে পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে এসেছেন জেলার সচেতন মানুষ গুলো।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আমি আপনাদের পাশে আছি সাথেই আছি। আপনারা পাশে থাকলে কোন বাধা- বাধাই না। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য কুড়িগ্রামে ‘ডিসি পার্ক’ হচ্ছে। পার্কের নামকরণ নিয়ে গুটি কয়েক লোক বিতর্ক করছে। জেলার বেশিরভাগ চিন্তাশীল সাধরণ মানুষজন বলছে, বিতর্ক সৃষ্টি করে কুড়িগ্রামের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি কু-চক্রি মহল ষড়যন্ত্র করছে। কুড়িগ্রামের উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এজন্য সকলকে সজাগ থাকারও আহবান জানিয়েছেন তারা।
কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে প্রস্তাবিত ‘ডিসি পার্ক’ কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়ে পার্কের নাম নিয়ে ফেইসবুক পোস্টে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্কের কাজ দেখতে আসা অনেকেই এই পার্কের নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে তা জানতে চেয়েছেন। তাদের আকাঙ্খার কথা বলতে গিয়ে জানান, কুড়িগ্রামে একটি বিনোদন পার্ক খুবেই প্রয়োজন। আমাদের কাংখিত পার্ক হচ্ছে দেখে আমরা খুবেই খুশি।
পার্কের নাম ‘ডিসি পার্ক কুড়িগ্রাম’ রাখা হয়েছে এ নিয়ে কারও কোন অনুযোগ নেই। কেউ কেউ বলেছেন, যারা নামকরণ নিয়ে বিতর্ক করছে তারা সংখ্যায় মাত্র দুই- একজন। ওদের সংখ্যা হাজার হলেও তাতে কী আসে যায়? দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ডিসি পার্ক নামে কয়েকটি বিনোদন পার্ক রয়েছে। কুড়িগ্রামে হলে ক্ষতি কি? আসলে পার্কের কাজ যাতে না হয় এজন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে তারা স্বার্থ হাসিলের গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বিনোদনের কোন জায়গা নেই। বিভিন্ন উৎসবে মানুষজন ধরলা ব্রিজে গিয়ে ব্রিজ ও ব্রিজ নিয়ন্ত্রিত দু’প্রান্তের বাঁধে একটু ঘোরাঘুরি করে সময় কাটায় মাত্র। কুড়িগ্রাম শহরে একটি বিনোদন পার্ক হোক। মানুষের সেটি বহুদিনের স্বপ্ন। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের একটি মিটিংয়ে জেলার প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সহ আমন্ত্রিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, শহরের গন্যমান্য সুধিজন, সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকতা সকলের মতামতের ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে ‘ডিসি পার্ক কুড়িগ্রাম’ নামে একটি পার্ক নির্মানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সিদ্ধান্তটি মিটিংয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে ‘ডিসি পার্ক’ নামকরণে একটি পার্ক নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেন। এরই প্রেক্ষিতে ধরলা সেতুর পূর্বপ্রান্তে কুড়িগ্রাম- ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে সরকারের পড়ে থাকা প্রায় ৩০ একর জমিতে পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। গত প্রায় এক মাসের মধ্যে বালু ভরাটসহ কিছু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক পার্কের নির্মাণ কাজ নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি করছেন। যতটুকু জানা যায়, পার্কে মিনি চিড়িয়াখানা, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন রাইড, পিকনিক স্পট, শোভা বর্ধনের বিভিন্ন স্পট, নামাজ ঘর, শিশু কর্নার, ভাওয়াইয়া কর্ণার, কছুমুদ্দিন কর্ণার সহ বিভিন্ন সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ (ফল-ফুল)লাগিয়ে পরিবেশ বান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন করা এবং পার্কটি ঘিরে মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর জন্য অভ্যন্তরে ও বাহিরে দোকান ঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে।
বর্তমান জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা ”ডিসি পার্ক কুড়িগ্রাম” এর কার্যক্রম দ্রুত বেগবান ও সম্পন্ন করার জন্যে খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে জানালেন কালবেলা’র জেলা প্রতিনিধি সাইয়েদ আহমেদ বাবু। তিনি আরও বলেন, মহৎ কাজেরও বাধা আসে। কিন্তু মহৎ কোন কাজ থেমে থাকেনা।
কিউএনবি/আয়েশা/১৮.০৬.২০২৫/রাত ১২.১৫