আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরান-ইসরাইল চলমান সংঘাতের মাঝেই সোমবার (১৬ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো ‘ট্রাম্প মোবাইল’। এটি মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে চালু হওয়া একটি নতুন মোবাইল ফোন সেবা।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি রক্ষণশীল গ্রাহক এবং ট্রাম্পপন্থিদের জন্য মূলধারার বিকল্প তৈরির একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা ব্যাপকভাবে ডিজিটাল মিডিয়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ট্রুথ সোশ্যালের মতো ব্র্যান্ডেড উদ্যোগের দিকে ঝুঁকেছে।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, এই ওয়্যারলেস সার্ভিস স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে এবং এর কাস্টমার সাপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে — তা স্পষ্ট করেনি। এমন অস্পষ্টতার কারণে টেলিকম বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। কারণ মার্কিন আইনে কোনো মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (MVNO) হিসেবে কাজ করতে গেলে বড় নেটওয়ার্ক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাধ্যতামূলক।
এদিকে বিষয়টির সমালোচনা করে বার্কলেস ব্যাংকের ইউএস মিডিয়া ও টেলিকম গবেষণা দলে এক নোটে বলা হয়েছে, ‘একজন প্রেসিডেন্টের নাম কোনো নিয়ন্ত্রিত পণ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নজিরবিহীন ঘটনা’। নেটওয়ার্ক চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) বর্তমান চেয়ারম্যান ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এবং আলোচিত প্রোজেক্ট ২০২৫ নীতিপত্রের সহ-লেখক। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ঘনিষ্ঠতা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
বার্কলেস আরও সতর্ক করে বলেছে, ‘এটি ভেরিজন বা এটি এন্ড টি’র মতো টেলিকম জায়ান্টদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে। বিশেষ করে যেসব কোম্পানি এখন মার্জার ও লাইসেন্স পর্যালোচনার মুখোমুখি’। এছাড়া টেলিকম চুক্তিতে থাকা ‘মোস্ট ফেভারড নেশন ক্লজ’ বা সর্বোচ্চ সুবিধার ধারাগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে যদি ট্রাম্প মোবাইল বিশেষ সুবিধা পায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ লরেন্স লেসিগ বলেন, ‘যারা গত কয়েক বছর মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন, তাদের জন্য এটা নতুন কিছু নয়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিকে তার ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছেন। এই উদাহরণ হয়তো আরও মানুষকে এই বাস্তবতা বুঝতে সহায়তা করবে’।
লন্ডনভিত্তিক টেলিকম বিশ্লেষক পাওলো পেস্তোরে বলেন, ‘এ উদ্যোগ প্রশ্নের চেয়ে উত্তর কম দেয়। সবসময়ই আসল বিষয় থাকে বিশদে — বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের দিকগুলোতে’। ব্যবসায়িক দিক থেকে এই উদ্যোগকে একটি জটিল ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রবেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ওহাইও’র অ্যাপটাস ক্যাপিট্যাল-এর প্রধান বিশ্লেষক ডেভিড ওয়াগনার বলেন, ‘সার্ভিসটির সম্ভাব্য বাজারের অর্ধেকই রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে আগ্রহী নাও হতে পারে। আর এই খাতে গ্রাহকদের বর্তমান সেবা প্রদানকারীর প্রতি আনুগত্যও অনেক বেশি’।
তবে কেউ কেউ একে সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। জ্যাকস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট-এর বিশ্লেষক ব্রায়ান মালবেরি বলেন, ‘৪৯৯ ডলারের এ ফোনের দাম বাজারে অ্যাপল ও স্যামসাং-এর মতো প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এমন ডিভাইসের একটি বাজার রয়েছে’।
তবে এখন পর্যন্ত ফোনটির ফিচার, অপারেটিং সিস্টেম বা অ্যাপ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। টেলিযোগাযোগ নীতিমালার সঙ্গে এর সামঞ্জস্যতাও স্পষ্ট করা হয়নি। আর ফোনটি বাজারে ছাড়ার এ ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নজরে রয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের চলমান আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা ঘিরে।
যদিও ট্রাম্প অর্গানাইজেশন দাবি করে, প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ ট্রাম্পের সন্তানদের হাতে। তবে সমালোচকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও ব্যক্তিগত লাভের মিশ্রণ এখনো নৈতিকভাবে বিতর্কিত। সূত্র: সামা টিভি
কিউএনবি/আয়শা/১৭ জুন ২০২৫, /রাত ১০:৩২