এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় মুখি কচু দামে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুঁটেছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় ও পাইকারি মুখি কচুর হাট চৌগাছা বাজার। শুক্রবার (১২ জুলাই) সাপ্তাহিক হাটের দিন। এই হাটে কাকডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার মুখি কচু বিক্রি করেন কৃষকেরা।
কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য তারা সরাসরি এ হাটে তোলেন। পাইকারি দামে বিক্রি করেন কচু। রাজধানী ঢাকা,রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী ব্যবসায়ীরা ট্রাক বোঝাই করে কিনে নিয়ে যায় কচু। এখানকার টাটকা কচু স্থানীয়চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার যায়।
জানা যায়, উপজেলার নারায়নপুর, স্বরুপদাহ, সুখপুকুরিয়া, হাকিমপুর, জগদিশপুর ও পাতিবিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকেরা শত শত ভ্যান, আলম সাধু, ইজিবাইক যোগে বস্তায় ভরে চৌগাছা পাইকারী বাজারেরনিয়ে আসেন মুকি কচু। কৃষকরা তাদের চাষের কচু নিয়ে আড়তে বসে থাকেন। বড় বড় পাইকরী ক্রেতাকে সেইকচু দেখে পছন্দ ও দামে পটে গেলে তা কিনে নেন। পরে নিজেদের বস্তায় ভরে ট্রাকে বুঝাই করে নিয়ে চলে যানরাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। শুক্রবার চৌগাছা পাইকারী বাজারে গিয়ে দেখা যায় পুরো বাজারটি কচুতে জমজমাট বা পরিপূর্ণ।
কচু বিক্রি করতে আসা উপজেলার পেটভরা গ্রামের শামছুল আলম জানান, উপজেলার সেরা কচু বিক্রির হাটএটি। এখানে ভালো দামে কচু বিক্রি করতে পারেন। কৃষকেরা সরাসরি পাইকারি দামে কচু বিক্রি করে ভালোলাভবান হন। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। এ বছর একবিঘা জমিতে মুকি কচুর আবাদ করেছি খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।
পৌর এলাকার আরেক চাষী বেলেমাঠ গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, পাশের উপজেলা ঝিকরগাছা, কোটচাঁদপুর, কালিগঞ্জ ও মহেশপুর থেকে কচু বিক্রি করতে কৃষকরা আসেন এ হাটে। এ হাটে বাইরের বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ীরা থাকেন এবং প্রচুর চাহিদা থাকে। যার ফলে কচু বিক্রির সাথে সাথে আমাদের টাকাও পেয়ে যাই।
কয়েকজন চাষী জানান, গত ১০ বছর যাবৎ এখানে কাঁচামাল ও কচু বিক্রি করতে আসেন। হাটে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। কখনো কচু বাড়িতে ফেরত নিতে হয় না। এ হাটে এলে বিক্রি হয় এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। আজ ভালো মানের কচু পাইকারি দাম দিচ্ছে ৫৩-৬০ টাকা কেজি দরে। তবে কখনো কম-বেশি হয়।
স্থানীয় আড়ৎদার আজিজুর রহমান জানান, কৃষকেরা সরাসরি জমির কচু তোলার পরই হাটে নিয়ে আসেন। একদিকে যেমন বিক্রি করতে নির্দিষ্ট জায়গা পেয়েছেন; তেমনই ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন গ্রেডের কচু বাছাই করে সংগ্রহ করতে পারছেন। এতে উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল কদর বলেন, কৃষকের ভাগ্য বদলে কাজ করছে উপজেলার পাইকারি কাঁচামাল ও মুখি কচুর হাটটি। এ উপজেলার এটিই বড় পাইকারি কাঁচা মালের হাট ফলে কৃষকেরা সরাসরি পাইকারি বাজারে বা হাটে কচু বিক্রি করতে পারছেন। মুখি কচু দামে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুঁটেছে। বাজারজাতের সুবিধা থাকায় আগামীতে ব্যাপকহারে কচু চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, মুখি কচু একটি লাভজনক চাষ। উপজেলাজুড়ে মোট ৩২৫ হেক্টর জমিতে মুখি কচুর চাষ হচ্ছে। মুখি কচু দামে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুঁটেছে। তাছাড়া আগামীতে এ উপজেলায় ব্যাপকভাবে মুখি কচুর চাষ বৃদ্ধি পাবে।
কিউএনবি/আয়শা/১২ জুলাই ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:২০