মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৫০ বছরের চুক্তি বাতিল করলো সৌদি

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৭ জুন, ২০২৪
  • ৯৬ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ দশকের চুক্তি বাতিল করে দিল সৌদি আরব। সম্প্রতি ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। সৌদি সরকার আর তার মেয়াদ বৃদ্ধি করেনি।

দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমেরিকার সঙ্গে পেট্রোডলারের চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল সৌদি আরব। এই চুক্তি দুই দেশের অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করত।

১৯৭৪ সালের ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত ৯ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই চুক্তি নতুন করে চালু করতে আগ্রহী নয় সৌদি।

পেট্রোডলার চুক্তি নতুন করে চালু না হওয়ায় বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মত অনেকের। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এই চুক্তির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

পেট্রোডলার কোনো মুদ্রা নয়। পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল রফতানির জন্য ব্যবহৃত আমেরিকান ডলারকেই পেট্রোডলার বলা হয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সোনা আদান-প্রদানের নীতি বাতিল করার পর পেট্রোডলার চালু করেছিল আমেরিকা।

সত্তরের দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। ডলারের দাম আচমকা পড়তে শুরু করেছিল। সেই সময়ে পেট্রোলিয়ামের সঙ্কটও দেখা দিয়েছিল আমেরিকা জুড়ে।

১৯৭৩ সালে মূলত মিশর এবং সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা।

ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় খনিজ তেলের বাণিজ্যে আমেরিকার উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে পশ্চিম এশিয়ার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো। তাতে তাদের খনিজ তেলের ভান্ডারে আরও টান পড়ে।

এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে সৌদি আরবের সঙ্গে পেট্রোডলার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ওয়াশিংটন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সৌদির কাছ থেকে তেল কিনবে আমেরিকা। পরিবর্তে সৌদিকে তারা সামরিক সহায়তা দেবে।

আমেরিকার কাছ থেকে সৌদি সামরিক সহায়তা পাওয়ায় ইসরায়েলের হাতে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। চুক্তির শর্ত ছিল, সৌদি শুধু আমেরিকা নয়, অন্য যে দেশেই খনিজ তেল বিক্রি করবে, অর্থের লেনদেন হবে ডলারে।

চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, পেট্রোডলার থেকে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তা আমেরিকায় ফেরত পাঠাতে হবে সৌদিকে। এর মাধ্যমে এক দিকে যেমন সৌদি সামরিক সুরক্ষা পেয়েছিল, তেমনই আমেরিকা পেয়েছিল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।

পেট্রোডলার চুক্তি আর নতুন করে চালু না করায় এখন থেকে সৌদি শুধু ডলার নয়, অন্যান্য দেশের মুদ্রাতেও খনিজ তেল বিক্রি করতে পারবে। চিনের ইউয়ান, ইউরোপের ইউরো, রাশিয়ার রুবেল, জাপানের  ইয়েন— কোনও লেনদেনেই সৌদির আর বাধা রইল না।

সৌদির এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বিপাকে পড়তে চলেছে বলে অনেকের ধারণা। কারণ, এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের লেনদেন বেশ খানিকটা কমবে।

গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’। একের পর এক দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসছে বা আসার চেষ্টা করছে।

ডলারের বিকল্প হিসাবে এখনও পর্যন্ত কোনও একটি দেশের মুদ্রার নাম এককভাবে উঠে আসেনি। ইউয়ান, রুবেল কিংবা ইয়েনের ব্যবহার পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। ওই মুদ্রাগুলোর দামও বেড়েছে।

তবে বিশ্ব বাণিজ্যকে এখনও নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র। তার চাবিকাঠি হলো ডলার। বেশির ভাগ লেনদেনের ক্ষেত্রেই সারা বিশ্বে আমেরিকার ডলার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মুদ্রার গুরুত্ব বেশি হওয়ায় আমেরিকার গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেই মুদ্রা থেকে একে একে ছোটবড় দেশগুলি মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছে। এতে আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নতুন কোনও সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপাকে পড়বে জো বাইডেনের দেশ।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ডলারকে আবার স্বমহিমায় ফেরাতে হলে আন্তর্জাতিক নীতিতে পরিবর্তন করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনের প্রাধান্যকে লঘু করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। কারণ আমেরিকার অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে চীন।

সৌদির সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ক্ষতি হবে কি না, তা সময় বলবে। তবে ডলারের রাজত্ব আমেরিকা আবার ফেরাতে পারে কি না, তার জন্য তাকে কোন কোন ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

কিউএনবি/অনিমা/১৭  জুন ২০২৪,/বিকাল ৪:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit