বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম এলাকা থেকে মুছে দেওয়ার হুমকি দেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজ্জা মো. ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রবিবার রাতে নাসিরনগর থানায় এ মামলা হয়। এর আগে নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিনের নাম নাসিরনগর থেকে মুছে ফেলার হুমকি দেওয়ায় অভিযোগে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজা মো. ফরাহদ হোসেনকে ‘তলব’ করেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। গত ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘চেয়ারম্যানের নাম মুছে দিতে চান এম.পি, হাত ভাঙার হুমকি আ. লীগ নেতার’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হলে সেটির সূত্র ধরে তাকে তলব করা হয়। তৎকালীন সংসদ সদস্য পরে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারি জজ ও নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল হক স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিত জবাব দেন। এর আগে ২২ ডিসেম্বর নাসিরনগরের কুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হওয়া নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংসদ সদস্য হুমকি দেন বলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব মো. আবদুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফরহাদ হোসেন ২২ ডিসেম্বর যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭ (১) (ক) এর বিধান এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ বিধির বিধান লঙ্ঘন করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৩ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১৮ এর অধীন সংশ্লিষ্ট থানায় এজহার দায়ের করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। গত ১১ জানুয়ারি এ চিঠিতে স্বাক্ষর করা হয়। নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সোহাগ রানা রবিবার রাতে দায়ের করা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফরহাদ হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যের খন্ডিত অংশের বিকৃত করে মিডিয়া কুচক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। লিখিত জবাবে তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানার অঙ্গীকার করেন।
লিখিত জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, তার বক্তব্যের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডের কারণে তার নাম জনগণের হৃদয় থেকে মুছে যাবে বুঝিয়েছেন। তিনি কাউকে কোনো প্রকার হুমকি প্রদান করেন নি। পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে নেয়া নির্বাচনী তদন্ত কমিটির পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার। পত্রিকার রিপোর্ট মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিধায় কারণ দর্শানোর দায় থেকে অব্যাহতি চান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে পাওয়া ভিডিওতে চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ভূইয়াকে উদ্দেশ্য করে সংসদ সদস্যকে বলতে শুনা যায়, ‘এই নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে।’ জনসভার ওই বক্তব্যের ছয় মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, ‘নাম বলতেও আমার লজ্জা লাগে। নিজেকেই আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, আমি কি মানুষ এত কম চিনলাম। আমি কিভাবে মানুষ চিনলাম। আমি নাম ধরেই বলছি। নাসির (কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান), আপনাদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমি খুব অবাক হয়ে গেছি। আগের দিন আমার সঙ্গে সে মিছিল করেছে নৌকার। হঠাৎ কি হলো। আমি তো জানতাম নাসির, তোমার ভাইয়েরা শিক্ষিত। তোমার বড় ভাইয়েরা শিক্ষিত। তুমি একজন শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। এত কথা, কাজের অমিল। কিন্তু তুমি মনে রেখো, তুমি খালি কুন্ডাবাসী নয়, এই নাসিরনগর থেকে তোমার নাম মুছে যাবে। আমি আজকে বলে দিয়ে গেলাম। নড়চড় মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। এটা আমি বলছি এবং নাসিরের বড় ভাইদেরকে বলছি, আপনারা যে স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্নেও গুড়েবালি। আপনাদেরকে নিয়েও মানুষ কথা বলবে।
নাসির উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তোমার বক্তব্য থাকতে পারে। আমি তো তোমাকে ডাকিনি। তুমিই এসেছিলে। তুমি স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করেছিলা ভালো কথা। আমি বলেছিলাম তুমি কাজ করো। তোমাকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। এর মানে এই নয় তুমি নৌকা উঠে নৌকার পিঠে ছুরি মারবা। তুমি বোকার স্বর্গে বাস করছো নাসির।’ পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একরাম্জ্জুামানের কড়া সমালোচনা করেন। বিশেষ করে তিনি এলাকায় আসতেন না বলে অভিযোগ তুলেন। গত ২৪ বছরে ৪৮টি ঈদে কেন তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে ছিলেন না সেই প্রশ্নটি একরামুজ্জামানকে করার জন্য আহবান জানান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বি এম ফরহাদ হোসেন অনেক বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এ আসনে জয়লাভ করেন ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জান। সরকারের সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাসে তিনি ভোটে দাঁড়ান বলে সাংবাদিকদেরকে জানান একরামুজ্জামান।
কিউএনবি/অনিমা/২৩ জানুয়ারী ২০২৪/দুপুর ২:১৮